পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ পরিচয়
পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ পরিচয়
নমস্কার সুপ্রিয় দর্শকবন্ধু, আজকের আয়োজনে রয়েছে ভারতবর্ষের অনোন্য রাজ্য "পশ্চিমবঙ্গ"।
রাজ্যের সীমানায় পূর্বে বাংলাদেশ, পশ্চিমে ওড়িষ্যা,
ঝাড়খণ্ড, বিহার সিকিম, উত্তরে হিমালয় এবং উপকূলীয় সুন্দরবনের অংশ। বাংলা ভাষি,
অবিভক্ত বাংলার পশ্চিম অংশ। আয়াতনে প্রায় ৮৮,৭৫২ বর্গ কিমি। জনসংখ্যার নিরিখে
ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য। বাঙালিরাই এই রাজ্যের প্রধান জনগোষ্ঠী ।
প্রাচীন বাংলা ছিল একাধিক প্রধান জনপদের কেন্দ্রস্থল। ২য়
শতাব্দিতে সম্রাট অশোকের সময়কাল থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য, একাধিক সুলতান, বারোভুইয়া,
সামন্তরাজা জমিদার ব্রিটিশরা এই অঞ্চল আসন করে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরের বাংলার বুকে
নেমে আসে 'বঙ্গভঙ্গ'এর কালো ছায়া। ১৯১১ সালে সেই বঙ্গভঙ্গ
রদ। তা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এই
অঞ্চল দ্বিখণ্ডিত হয়।
গঠিত হয় বাংলার পূর্ব ভূখণ্ড নিয়ে পাকিস্থান রাষ্ট্রের
পূর্ববাংলা, অধুনা বাংলাদেশ নামে পরিচিত। অন্যদিকে পশ্চিম ভুখন্ড নিয়ে গঠিত হয়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। রাজ্যের রাজধানী হয় সপ্তম বৃহত্তম মহানগরী কলকাতা।
রাজ্যটি ৫টি বিভাগে ৩০টি জেলায় বিভক্ত। তবে ভারতবর্ষের
স্বাধীনতা কালে ১৪ টি জেলা ছিল। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পূর্বতন দেশীয় রাজ্য
কোচবিহার, ১৯৫৪ সালে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর আর রাজ্য পুনর্গঠন আইন
অনুযায়ী ১৯৫৬ সালে পুরুলিয়া এবং বিহারের কিছু অংশ যুক্ত হয়। আর 2022-এ মন্ত্রীসভার অনুমোদনে সাতটি নতুন জেলা তৈরি হয়। সব মিলে
রাজ্যের বর্তমান জেলার সংখ্যা দাড়ায় ২৩ থেকে ৩০টি। লোকসভার ৪২ টি, বিধানসভার ২৯৫ টি আসন
নিয়ে বৃহত্তম গনতন্ত্রের উৎসবে ভারতবর্ষের নির্বাচনে শামিল হয়।
আকাশ পথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক
বিমান বন্দর, রেলপথে হাওড়া, কলকাতা,
শিলিগুড়ি, সড়ক পথে এনবি এসটি, এসবি এসটি, ডব্লিউ বিটি এস পরিসেবা মুগ্ধ
করে।
অর্থনীতি মুলত কৃষি এবং মাঝারি শিল্প নির্ভর। GDP এর বিচারে ভারতবর্ষে ষষ্ঠ। কৃষি ক্ষেত্রে ধান উৎপাদনে
প্রথম। বর্ধমান জেলা শষ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য ফসলের মধ্যে আখ, তৈলবীজ,
পাট গম আলু উৎপাদিত হয়। দার্জিলিং উচ্চমানের চা কমলা, আপেল অর্থনীতিতে গতি আনে।
উত্তরে কোচবিহারের রাজবাড়ি, মদনমোহন বাড়ি, দার্জিলিং এর সুউচ্চ টাইগারহিল আর বিস্তৃত সমভূমি, দক্ষিনের রাঙা মাটির
বীরভূম, জগদ্ধাত্রীর চন্দননগর, জমজ শহর হাওড়া-হুগলী, আনন্দময়ী কলকাতা, শিল্পের
দূর্গাপুর, নবাবের মূর্শিদাবাদ, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন আর বাংলার অক্সফোর্ড
নদীয়া সহ সৈকত বেষ্টিত মেদিনীপুর সবাইকে আকর্ষন করে।
গোরুমারা ন্যাশনাল পার্ক, জলদাপাড়া ন্যাশনাল
পার্ক, এবং বক্সা টাইগার
রিজার্ভ জলদাপাড়া সন্তুয়ারি এই এলাকার উল্লেখযোগ্য বন্য প্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্র। মোট ৬টি
জাতীয় উদ্যান ও ১৫টি বন্যপ্রাণী অভ্যারন্য রয়েছে।
ডুয়ার্স এর শান্ত গ্রাম, মন্দির এবং ঐতিহাসিক স্থান ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে, পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এছাড়াও সুন্দর বনের সুন্দরী,
রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কলকাতার বুকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বরের
কালীবাড়ি, বিষ্ণুপুরের
টেরাকোটা মন্দির স্থাপত্য উল্লেখযোগ্য।
ভাষা ও সংস্কৃতিতেও রাজ্যের অগাধ বিচরন। বাংলায় 86%,
হিন্দিতে 6.9%,
সাঁওতালিতে 2.6%, উর্দুতে 1.8% এবং নেপালিতে 1.2% ভাষাভাষীর মানুষ আছে। ব্যপকভাবে বাংলা ভাষাররই প্রচলন
বেশি।
সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ,উৎসব
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ সবার চেয়ে এগিয়ে। এই রাজ্যেই রয়েছে এশিয়ার প্রথম নোবেল জয়ী
সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রয়েছে রাঢ় বাংলার তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল
ইসলাম। রয়েছে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিত রায়, মৃনাল সেন,
ঋত্ত্বিক ঘটকেরা। এছাড়াও রবীন্দ্র-নজরুল, অতুলপ্রসাদী, দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্ত সেনের গান বাংলা ও বাঙালির চির পছন্দের।
জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি গম্ভীরা ,ছৌ, ঝুমুর, ভাদু, টুসুর মাধ্যমে বারো মাসের তেরো পার্বনে মোহিত
কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হয়ে উঠে।
প্রবাদে আছে "What Bengal
thinks today, India thinks tomorrow". এই রাজ্যএর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু , আপোষহীন
মুক্তিযোদ্ধা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, গান্ধীবুড়ি মাতঙ্গিনী হাজরা, মাস্টার দা সূর্য সেন, সমাজ সংস্কারক স্বামী বিবেকানন্দ, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়রা নতুন করে ভাবিয়েছে।
প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব
বসু, মমতা ব্যানার্জি প্রমূখদের মতো রাজনীতিবিদদের হাত ধরে বাংলা এগিয়ে যাবে নতুন ধারায়।
তবে, অতীতের ইতিবৃত্ত যতোই সুখের হোক না কেন, বর্তমানে
কিছুটা আশাহত হতেই হয়। বেকারত্ব, নৈতিকতার অবক্ষয় আর অনুন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে রাজ্য, রাজ্যবাসী। বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতির অগ্রগতি আজ স্তিমিত। রাজ্যের পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে
আনতে এক যোগে কাজ করতে হবে রাজ্যের সমস্ত চিন্তাশীল নাগরিককে।
এতক্ষন পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
No comments