ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ললিত ও লাবণ্যঃ একটি বিশ্লেষণী অধ্যয়ন (দ্বিতীয় পর্ব)
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ললিত ও লাবণ্যঃ একটি বিশ্লেষণী অধ্যয়ন (দ্বিতীয় পর্ব)
পাঁচ.
এলিজাবেথ বলেছেন যে, The short story is a young art as know it is a child of the century. ছোটগল্প শিল্পের দিক থেকে সত্যিই নবীন। উনবিংশ শতাব্দীতে এই শিল্পের আবির্ভাব। সমালোচকেরা ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের আমেরিকায় Washington Irving এর “Sketch Book” এর প্রকাশ কালকেই আধুনিক ছোটগল্পের সূচনাকাল বলে চিহ্নিত করেন।
ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ডক্টর অশোক কুমার মিশ্র বলেছেন যে, “আয়তনের দিক থেকে সংক্ষিপ্ত; ভাবের দিক থেকে অখন্ড, অনুভূতির দিক থেকে বৈচিত্র সম্পাদনকারী গদ্যে রচিত কাহিনিই হল ছোটগল্প”।৯ ডক্টর মিশ্রের মতো এডগার এলান পোও ছোট গল্পের সংক্ষিপ্ততার কথা বলেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন ছোট গল্প হলো সেই ধরনের গল্প যা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। তবে আয়তনের দিক দিয়ে ছোট হলেই ছোট গল্প বলা যায়, এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায় না। তবে ডক্টর উজ্জ্বলকুমার মজুমদারের মতে “ছোটগল্প হল এমন এক কাহিনী যা কোন ঘটনা পরিবেশ বা মানসিকতাকে নির্ভর করে একটি ভাবগত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে এবং সেই প্রতিষ্টিত ভাবগত গভীর প্রতীতি ক্রমশ নাটকীয় শীর্ষদেশ স্পর্শ করে, পাঠকের মনোভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে”।১০ সুতরাং ছোটগল্পে একটি কাহিনী থাকবে ছোট-বড় আয়তনে কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় না তাতে ঘটনা পরিবেশ বা মানসিকতাকে কেন্দ্র করে একটি ভাবগত ঐক্য স্থাপিত হবে। তা সত্বেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখার গুলি থেকে ছোট গল্পের কাহিনি সংক্ষিপ্ততাকে স্বীকার করতেই হয়। এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ভাষার মাধ্যমে জগত ও জীবনকে দেখানো হয়। সমগ্র জীবনের খন্ড খণ্ড চিত্রগুলিকে ব্যাঞ্জিত করা হয়। জীবনের সুখ-দুঃখ এবং গোপন ঘাত-প্রতিঘাত গুলিকে টেনে এনে পরিণামমুখী করে নাটকীয় চমক দেওয়া হয়। এই কারনে ধরে নেওয়া হয় যে জীবনের একটি খণ্ডাংশকে তুলে ধরা হয় বলে কাহিনির দিক থেকে সংক্ষিপ্ত হয়। আর সেই সংক্ষিপ্ত কাহিনিতে ভাবগত ঐক্যের মধ্য দিয়ে নাটকীয় চমক থাকবে। যা রস সমৃদ্ধ হয়ে পাঠকের মনকে বিশ্বলোকে জারিতকরতে সক্ষম হবে।
“ললিত ও লাবণ্য” ত্রৈলোক্যনাথের একটি সার্থক ছোটগল্প। গল্পের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এখানে একমুখী কাহিনি রয়েছে। পরিবারের গৃহকর্তার অস্বাভাবিক আচরণে দ্রুত পরিণতি নেমে এসেছে। কার্যকারণের স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি নিটোল কাহিনীকে কেন্দ্র করে লেখক এক কঠোর সমাজবাস্তবতার খোঁজ দিয়েছেন অর্থাৎ কাহিনী গত দিক থেকে কোন শাখা প্রশাখা নেই। গল্পকার গৃহকর্তার জীবনের একটি খন্ডাংশকে বাস্তব সত্যে পরিণতি দান করেছেন।
ত্রৈলোক্যনাথের “ললিত ও লাবণ্য” গল্পটি সার্থক ছোটগল্প হিসেবে স্বীকৃত। গল্পের কাহিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। নামহীন গ্রামের একটি পরিবারের করুণ কাহিনি। পরবর্তীকালে তারা খিদিরপুরে এক বিধবার বাড়িতে বসবাস করে। এটি পারিবারিক ছোটগল্প। পরিবারের কর্তা নেশাখোর মদ্যপানে আসক্ত। শুধু স্ত্রীর প্রতি নয়, সাত বছরের পুত্র ললিতের প্রতি ও পাঁচ বছরের কন্যা লাবণ্যের প্রতি তার কোনো আন্তরিকতা ছিল না। সে ছেলের পুরস্কার পাওয়া বই, মেয়ের হাতের বালা খুলে নিয়ে বিক্রি করে মদ্যপান করে। বাড়ির বাইরে রাত কাটায়, নিজের বিষয়সম্পত্তি আর আসাম থেকে ভাইয়ের দেওয়া টাকা শেষ করে পরিবারটিকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
একদিন বাইরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অপমানিত হয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে। আফিম খেয়ে এসে পরিবারের সকলকে আপন করে নিতে চায়। স্নেহ ও অনুতপ্ত বলে যায়- “দেখো এতদিন আমি অন্ধও পাগল হইয়াছিলাম; তোমরা আমাকে ক্ষমা কর”।১১ এই বলে গৃহকর্তা সেদিন চির বিদায় নিল। কিন্তু তার পাপের ভাগীদার এখন পুরো সংসার। সংসারের সব কিছু খুইয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে পথে বসিয়েছে। নিরুপায় স্ত্রীরদেবরকে চিঠি লিখে সঠিক সময়ে উত্তর না পেয়ে পুত্রকন্যাসহ আত্মহত্যা করে। গৃহকর্তা ব্যাভিচারী জীবনের বুঝতে পেরেছিল। নিজের জীবন দিয়ে তা পরিপূর্ণ করে গেছে। কিন্তু গৃহকর্ত্রী প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি। পরনির্ভরশীল সংসারে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তাই পরিবারের কর্তার বিষবাষ্পে ললিতের মাতা বিষাক্ত হয়ে ললিতও লাবণ্যসহ আত্মহত্যা করেছে। অকালে ঝরে গেছে তাদের জীবন। ত্রৈলোক্যনাথ অত্যন্ত সহজ সরল রৈখিক ভাষায় মূল্যবোধের বিষবাস্পে বিষাক্ত এই কাহিনীর উন্মোচন করেছেন।
স্থান-কাল-পাত্রকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে জীবনের চরম সত্যকে আখ্যায়িত করলেন এক ঝলকে। নামহীন গৃহকর্তার চরিত্রটির চিত্রণও অসাধারন হয়ে উঠেছে। কারণ ছোটগল্পের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো চরিত্র সৃজন। গৃহকর্তার সঙ্গে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সম্পর্ক, তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার, অন্যায় আবদার এবং বাড়ির বাইরে ব্যভিচারী জীবন যাপন; শেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে জীবনের আনন্দ ভূমিতে ফিরে আসার আকুতি; স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চরিত্রটিকে মানবিক গুন সম্পন্ন করে তুলেছে। এছাড়াও স্ত্রী চরিত্রটিও সংগ্রামে দিশেহারা ও ব্যর্থ হয়ে হয়ে পরিস্থিতির কাছে হার মানে। প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে না পেড়ে ললিতের মাতা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নিরুপায়হীন সংগ্রামী নারী চরিত্র অঙ্কনে লেখক সার্থক হয়েছে।
হৃদয়ের একটা ভাব প্রকাশের চেষ্টা করে ছোটগল্প। জীবনের খণ্ড বর্ণনার চেষ্টা করে। সেই ঘটনায় জীবনের ছন্দের মতো একটা কাব্যময়তা থাকে। এই গল্পেও গল্পকার এক কাব্যিক ভাষার মাধ্যমে পটভূমি শুরু করেন। শিশুর চিরকালীন আবদারের মধ্য দিয়ে গল্প শুরু হয়। পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান স্পষ্ট হয় ললিতের প্রাথামিক কথায়- “মা বইগুলি বাবাকে দেখাইব? কিন্তু মা ভয় করে। আর সকলের বাবা ছেলেদের আদর করেন, কিন্তু আমাদের বাবা কেবল বকেন কেন, মা? যা থাকে কপালে; কেবল আজ আমি তাহাকে প্রাইজের বইগুলি দেখাইব”।১২ সাত বছরের ছেলে ললিতের সাহসিকতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। সে সব রকমের ভয় আশঙ্কা দূরে রেখে পিতার কাছে ছেলের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। পিতাও চারিত্রিক ধর্মে নস্যাৎ করে দিয়েছে, পরে দেখবে বলে বইগুলিকে রেখে যেতে বলেছে। সেই পুরস্কারকৃত বই ও পাঁচ বছরের কন্যা লাবণ্যের হাতের বালা নিয়ে নিয়ে ললিতের পিতা নেশার টাকা জোগাড় করে। আমোদ-প্রমোদে দিন যাপন করে। হাতের বালা হারিয়ে লাবণ্য কেঁদে উঠে। অবশেষে ললিত বলে উঠেছে- “লাবণ্য তুমি কাঁদিও না। আমি যখন টাকা আনিতে শিখিব, তখন তোমাকে বড় বড় বালা কিনিয়া দিব”।১৩ বস্তুত প্রয়োজন ও পরিবেশ অনুযায়ী এখানে ভাষা উঠেছে কাব্যময় ও আবেগতাড়িত।
গল্পের গঠনকৌশলটিও লক্ষনীয়। ললিতের পিতা সম্পত্তি বিক্রি করে আমোদ-প্রমোদে দিন যাপন করে চলেছে। পরিবারের চেয়ে সে বাইরে বেশি দিন যাপন করে। কিন্তু প্রতিদিন যে স্থানে তিনি রাত্রিযাপন করেন “যাহার জন্য তিনি স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিদারুণ ক্লেশ দেন, বালা বিক্রয়ের টাকা যাহার শ্রী-পাদপদ্মে অর্পন করিয়াছিলেন, দুই চারিদিন পরে সে তাহাকে অনেক অপমান করিয়া বাটি হইতে বাহির করিয়া দিল। ললিতের পিতা শোকে অধির হইয়া পড়িল”।১৪ এই ঘটনাই ললিতের পিতার রূচি ও মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটাল। গল্পকার এমন সময় গৃহকর্তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটালেন তখন তার ফিরে আসার উপায় ছিল না। গৃহকর্তার জীবনের মূল্যবোধ ও জীবন দর্শনের পরিধি তার জীবনের করুণ পরিণতির জন্য দায়ী।
গল্পের পরিসমাপ্তিতে থাকে একটি কৌতুহল ও অতৃপ্তিবোধ। এইগল্পেও সেই বৈশিষ্ট্যটি প্রতিফলিত হয়। যেমন নিরুপায় গৃহকর্ত্রী পুকুরে ঝাপ দেয়; অন্যদিকে টাকা নিয়ে দ্রুত আসে খিদিরপুরে। লেখক এক টান টান উত্তেজনায় ললিতের কাকাকে দাঁড় করিয়ে দেয় পুকুরের পাশে পাওয়া মৃতদেহগুলির সামনে। তাদের চিহ্নিত করতে পেরে এক আকস্মিকতায় জীবনের চরম মুহূর্তের পরিচয় দেন কাহিনির শেষাংশে। ললিতের কাকা বলতে থাকে- “ললিত লাবণ্য! একবার ওঠ। একটা কথা কও! আমি তোমাদের কাকা আসিয়াছি। আর তোমাদের ভাবনা নাই; আমি তোমাদের জন্য টাকা আনিয়াছি। উঠ বাবা! একটা কথা কও”।১৫ এইভাবে কাহিনি পরিণতিতে এক অতৃপ্তি বোধও জেগে থাকল পাঠকের মনে। তাদের মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা আমাদের সামনে একটি প্রশ্নকে জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো তুলে ধরে। এই ভাবে গল্পটি সার্থক ছোটগল্প হয়ে ওঠে।
ছয়.
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় কল্পনাপ্রসূত ঐন্দ্রজালিক শিল্পী। ঐন্দ্রজালিক শিল্পী হলেও সমকালীন বাস্তবতাকে ভুলে যাননি। আমার আলোচ্য গল্পটি ঐন্দ্রজালিকতার বিপরীত মেরুতে অবস্থিত সমকালীন বাস্তবতাকে কঠোরভাবে উপস্থাপন করেন। তাই গল্পের চরিত্রগুলিও বাস্তব জগতের আর তাদের পরিণতিও বাস্তবোচিত হয়। গল্পকার উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় জীবন যুদ্ধে পরাজিত নেশাগ্রস্ত এমন অনেক চরিত্র দেখেছিলেন, যাকে কেন্দ্র করে এই গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্রকে অঙ্কন করেছেন।
স্থান কাল পাত্রকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করে জীবনের চরম সত্যকে আখ্যায়িত করলেন এক ঝলকে। নামহীন গৃহকর্তার চরিত্রটি অসামাজিক হলেও শেষে করুনা আদায়ে অসাধারণ হয়ে উঠেছে। কারণ ছোটগল্পের অন্যতম একটি লক্ষণ হল চরিত্র সৃজন। স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সম্পর্ক, তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার, অন্যায় আবদার এবং বাড়ির বাইরে জীবনযাপন, শেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে জীবনের আনন্দ ফিরে আসার আকুতি, ছেলে মেয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা গৃহকর্তা চরিত্রটিকে মানবিকগুন সম্পন্ন করে তুলেছে। এছাড়াও স্ত্রী চরিত্রটিও দিশেহারা ও ব্যর্থ হয়ে পরিস্থিতির কাছে হার মানায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ললিতের মায়ের মধ্যে দিয়ে এক ব্যর্থ নিরুপায় নারী চরিত্র অঙ্কনে লেখক সার্থক হয়েছে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ললিতের পিতা। ললিতের পিতা একজন ট্রাজিক চরিত্র। প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করে নেশায় মত্ত হয়ে জীবনের চরম পরিণতিকে অনিবার্য করে তুলেছে। গৃহকর্তাকে কেন্দ্র করেই গল্পটি আবর্তিত। গৃহকর্তার জীবনে দুটি পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে নীতিবর্জিত ব্যভিচারী অসামাজিক আচরনে অভ্যস্ত। জীবনের প্রথম পর্যায়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যার প্রতি স্নেহ মায়া-মমতা নেই। গল্পকার বলেছেন “ললিতের পিতার কিছু সম্পত্তি ছিল। সে সমুদায় তিনি নষ্ট করিয়াছেন। যে দুইবিষয়ে মানুষ অধঃপাতে যায়, সে দুই বিষয়ে এখনও পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। সংসার চলিবার উপায় নাই”।১৬
এই কেন্দ্রীয় চরিত্রের মধ্য দিয়ে সামাজিক মানুষের অসামাজিক মানসিকতাকে তুলে ধরলেন। ত্রৈলোক্যনাথের ‘ললিত ও লাবণ্য’ গল্পটি একটি বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল। গৃহকর্তা চরিত্রের মধ্যে দিয়ে উনবিংশ শতকের তথাকথিত আনন্দ বিলাসী বিকৃত মস্তিষ্কতাকে তুলে ধরেছেন।গৃহকর্তারস্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ সুখের সংসার থাকা সত্ত্বেও “মদ খাইয়া প্রতিদিন যে স্থানে তিনি রাত্রিযাপন করেন; সেই স্থানে গিয়া রাত্রিযাপন করিলেন”।১৭ এই স্বভাব বৈশিষ্ট্যে ললিতের পিতা অসৎ চরিত্রের প্রমাণ দেয়। তবে গল্পের কোথাও দাম্পত্য জীবনের ব্যর্থতাকে দেখানো হয়নি বা গৃহকর্তার জীবন অন্ধকারে পতিত কারণ হত। দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া সত্বেও অসুখী এই মানুষটি কোনদিন স্ত্রীমৃত্যুও কামনা করেনি। বা সন্তান-সন্ততিদের মৃত্যু কামনা করেনি। গল্পকারের পূর্বসুরী বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসে যেমন দেবেন্দ্রনাথের অধঃপতনের মূলে ছিল দাম্পত্য জীবন। দাম্পত্য জীবনে অসুখী হয়ে সে বারবার স্ত্রী মৃত্যু কামনা করেছে কিন্তু গল্পে বর্ণিত গৃহকর্তা স্ত্রীর প্রতি বা দাম্পত্য জীবনে অসুখী ছিলেন না, তা সত্ত্বেও তার জীবনের অসামঞ্জস্যতাকে বরণ করে নেন।
গৃহকর্তা চরিত্রটির দ্বিতীয় পর্যায়ে গল্পকার আত্মক্ষালনের দিকটাও তুলে ধরেছেন। ললিতের পুরস্কৃত বই, লাবণ্যের হাতের বালা, পরিবারের সব কিছু বিক্রি করে আমোদ-প্রমোদে উন্মুক্ত কর্তাটি যখন নিজেকে সংবরণ করতে পারছেনা তখনই কর্তার জীবনে ক্লাইম্যাক্স ঘটে। তার জ্ঞানচক্ষু খুলতে সাহায্য করে “প্রতিদিন যে স্থানে তিনি রাত্রিযাপন করেন, যাহার জন্য তিনি স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে এরূপ নিদারুণ ক্লেশ দেন, বালা বিক্রয়ের টাকা যাহার শ্রী-পাদপদ্মে অর্পণ করিয়াছিলেন, দুই চারিদিন পরে সে তাহাকে অনেক অপমান করিয়া বাটি হইতে বাহির করিয়া দিল। ললিতের পিতা শোকে অধীর হইয়া পড়িলেন”।১৮ এই শোকই জীবনের প্রকৃত অবস্থাকে বুঝতে সাহায্য করে। জীবনের চরমতম সময়ে এসে জীবনকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। গৃহকর্তার আত্মসমীক্ষার এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ত্রৈলোক্যনাথের জীবন-দর্শনের দিকটিও প্রতিফলিত হয়েছে। এই কারণে গল্পকার অসুস্থ গৃহকর্তার মুখ দিয়ে বলিয়ে নিয়েছে- “দেখ, আমি এতদিন অন্ধ ও পাগল হইয়াছিলাম; তোমরা আমাকে ক্ষমা কর”।১৯
গৃহকর্তা নেশাখোর। সমাজ বিচ্যুত আত্মমুখি চরিত্র। নিজের আত্মসুখের জন্য পরিবারকে, পরিবারের সুখকে বিসর্জন দিতে পিছ পা হয়না। তৎকালীন সময়ের তথাকথিত আনন্দ বিলাসী বিকৃত মস্তিষ্কতাকে তুলে ধরেছেন। সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখক সাহিত্যিক চিরকালের আবেদন রাখেন। ত্রৈলোক্যনাথ গল্পের গৃহকর্তার কর্মকাণ্ডে মানব জীবন রসের পর্যাপ্ত সমাবেশ ও শিল্প সৌন্দর্যকে পরিবেশন করে পাঠকের হৃদয়ে চিরন্তন আবেদন রেখেছেন। গল্পকার সময়ের দিক থেকে অধঃপতন ও অবক্ষয়ের বিচার করে গৃহকর্তার চরিত্রে মূল্যবোধের অস্তিত্বকে ধরতে চেয়েছেন। অপূর্ব কৌশলে এই চরিত্রটিকে মানবীয় রূপদান করেছেন। তাই গৃহকর্তার চরিত্রের জন্য পাঠকের মন অনুশোচনায় ভরে যায়।
গল্পে নারী চরিত্র হিসেবে ললিতের মাকেই প্রাধান্য পেতে দেখা যায়। তবে সক্রিয় চরিত্র হিসেবে নয় তাঁর নিষ্ক্রিয়তা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রামহীন মানসিকতাই বাহার মেনে নেওয়া মানসিকতাই এই গল্পের মুখ্য কথাবস্তু।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেন নাহি দিবে অধিকার’।২০ আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার ললিতের মায়ের থাকা উচিত ছিল। তার অধিকারহীনতাই ফুটফুটে ললিত ও লাবণ্য এই পৃথিবীর রূপ রস আলো অন্ধকার থেকে চিরতরের জন্য বঞ্চিত করেছে।
গল্পটি বিয়োগান্তক। গল্পের নারী চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে সমগ্র গল্পটি বিষাদান্তক হয়ে উঠেছে। গল্পের পুরুষ চরিত্র গৃহকর্তার প্রতি গুরুত্ব আরোপ হলেও গল্পের প্রকৃত সংকট দেখা যায় ললিতের মায়ের চরিত্রে। আমরা জানি ‘সংসার সুখী হয় রমনীর গুনে’ এই প্রচলিত প্রবাদের গুণ যে ললিতের মায়ের ছিল না, তা বলা যায় না। কারণ ললিত যখনতার প্রাইজের পাওয়ার কারণ বলেছে তখনই শ্নেহার্দ ভাষায় ললিতের মা বললেন- “বাচিয়া থাক, বাবা! চিরজীবী হও!”২১ ললিতের মা স্নেহময়ী, পতিভক্তি পরায়ণা ছিল। গৃহকর্তা আফিম খেয়ে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রতি স্নেহ মায়া-মমতায় বাঁচানোর চেষ্টা তাকে দায়িত্বশীল মমতাময়ী করে তুলেছে।
গল্পের তৃতীয় পরিচ্ছেদে গৃহকর্তা আফিম খেয়ে বাড়িতে ফিরলে, সেই মা’ই তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু সেই গৃহকর্তার অসামাজিক ও ব্যভিচারী আচার-আচরণ ললিতের মায়ের শোচনীয় অবস্থা ডেকে আনে। গৃহকর্তার মৃত্যুতে "ললিতের মা কাঁদিয়া উঠলেন। মাটিতে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল।....সহায় সম্পত্তিহীনা স্ত্রী; শিশু সন্তান দুটিকে লইয়া যে কি করিবেন; কি খাওয়াইবেন; তাহার কোনো উপায় ছিল না"।২২ স্বামী বেঁচে থাকতে ললিতের মা যে দুঃসহ জীবন পালন করেছে, স্বামীর মৃত্যুতে তার জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
ললিতের মা চির দুঃখী, প্রতিবাদহীনা নারী। গৃহকর্তার মৃত্যুর পর সংসারের হাল একেবারে ছেড়ে দেয়নি। নিজের আয়ত্তের মধ্যে থেকে চেষ্টা চালিয়েছে ছেলেমেয়েদের বাঁচানোর। ললিতকে দিয়ে তার কাকাকে চিঠি লিখেছে, খিদিরপুর থেকে তাদের পরিচিত আত্মীয়ের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে। অভাব-অনটনে থেকে বুদ্ধিহীনা ললিতের মা। কলকাতার বাড়িতেও আশ্রয় মিলেনা। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে নিজে ও নিজের সন্তানদের জীবন নিয়ে পুকুরে ঝাপ দেয়, পরলোকে যেতে বাধ্য হয়।ললিতের মা জীবনের প্রতি পদে পদে যে শূন্যতা অনুভব করে তাই তাকে কঠিন করে তুলেছে। পারিপার্শ্বিক সমাজ ও পরিবেশের সংঘাত তাকে ব্যথিত করেছিল এবং আত্মঘাতী কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল।
সাত.
কোন সাহিত্যিকই একই ঘরানার সাহিত্য রচনা করে না। প্রত্যেকের একটা নিজস্ব ঘরনা বা শৈলী আছে। ত্রৈলোক্যনাথও এমন একজন সাহিত্যিক তারও নিজস্ব একটা ঘরানা আছে। তাঁর পূর্বসূরি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে ঘরানায় সাহিত্য রচনা করেন তার থেকে কিছুটা সরে এসে ত্রৈলোক্যনাথ অন্যভাবে কলম ধরলেন। উনবিংশ শতকে ছোটগল্প পশ্চিমী ভাবধারায় সূত্রপাত হয়। সেই ভাবধারা থেকে সরে এসে ত্রৈলোক্যনাথ ভারতীয় ভাবধারায় সাহিত্য রচনা করেন। হাসি-ঠাট্টার লৌকিক ঐতিহ্যকে হাতিয়ার করে স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোনের পরিচয় দেন।
“বিদ্যাসাগরের গদ্যের কাঠামোর মধ্যেই ত্রৈলোক্যনাথের ব্যক্তি সত্তার বিকাশ। .... ত্রৈলোক্যনাথ যখন প্রথম সাহিত্য ক্ষেত্রে আবির্ভূত হন (কঙ্কাবতী ১৮৯২), তখন বাংলা গদ্য রীতিমতো বঙ্কিম-শাসিত। গদ্যে রাবীন্দ্রীক ঐতিহ্যের সূচনা বিংশ শতাব্দি থেকে, মূলতঃ ‘চোখের বালি’ বেরবার পর থেকে। সে যাই হোক, প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ভূত ও মানুষ’ বেরিয়েছে ১৮৯৭ সালে, দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘মুক্তা-মালা’ ১৯০১এ। এপর্যন্ত বাংলা গদ্যে বঙ্কিমীরীতীর অবিসম্বাদিত প্রভাব। কিন্তু ত্রৈলোক্যনাথ তাঁর ভাষা নির্মানের ক্ষেত্রে সচেতন ভাবে বঙ্কিমী ঐতিহ্যকে এড়িয়ে চলেছেন। ....সচেতন শিল্প বোধ থেকেই তিনি আখ্যানধর্মী গল্পকথনের উপযোগী একটি ভাষাশৈলী নির্মাণ করেছেন যা সমকালে প্রচলিত প্রধান গদ্যরীতি বা বঙ্কিমীরীতি থেকে একেবারেই আলাদা বা স্বতন্ত্র”।২৩
“ললিত ও লাবণ্য” গল্পটির আরম্ভ ও শেষের মধ্যে এক নিটোল বন্ধন আছে। যা সংযম ও সংহতিতে বড় মাপের শিল্পকর্মের অভিধা দেয়। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের অধঃপতন ও তার অধঃপতনকে কেন্দ্র করে পরাভব ও তার ট্রাজেডি গল্পটিকে সার্থক করে তুলেছে।
ত্রৈলোক্যনাথ গল্পের প্রকরণ ও ভাষা বৈশিষ্টে রূপক প্রতীকের চেয়ে ব্যাঞ্জনাগর্ভ আখ্যান বস্তুকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সহজ-সরল মৌখিক চালে সর্বধংশী রূপায়ব রচনা করেন। স্থান-কাল-পাত্রকে ব্যবহার করে জীবনের চরম সত্যকে আখ্যানে রচনা করলেন। রচনারীতির আশ্রয় সাধুভাষা। সাধুভাষায় মৌখিক গল্পকথনের ভঙ্গিতে গল্পটি রচিত। কাউকে গল্প বলার ঢং-এ লেখক ধারাবাহিকভাবে বলে চলেন- গৃহকর্তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সম্পর্ক, তাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার, অন্যায় আবদার এবং বাড়ির বাইরে ব্যভিচারী জীবন যাপন, শেষে নিজের ভুল বুঝতে পেরে জীবনের আনন্দভূমিতে ফিরে আসার আকুতি, স্ত্রী ছেলে ও মেয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কিংবাতার মৃত্যুতে সমগ্র পরিবারের মৃত্যু। গল্পটিকে ব্যাঞ্জনাগর্ভ করতে পারেনি বরং এক রৈখিক তাৎপর্য দান করেছে। এই প্রসঙ্গে ডক্টর মানসী সেনগুপ্তের বক্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে- “সাধু গদ্যের কাঠামো তিনি বজায় রেখে ছিলেন। বিষয়ের গুরুত্ব অনুযায়ী ভাষার চেহারাও বদলেছেন। তবে ভাষারীতির প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সমকালীন লেখকদের তুলনায় ত্রৈলোক্যনাথ স্বাতন্ত্র্য দেখিয়েছেন। অলংকৃত এবং তৎসম শব্দবহুল ভাষার চেয়ে অলংকৃত কথ্যভাষাই ত্রৈলোক্যনাথের সবচেয়ে প্রিয় ছিল।...ত্রৈলোক্যনাথ মূলতঃ ছিলেন গল্পকথক। কাজেই তাঁর ভাষাতেও সেই কথনরীতির ছাপ সুস্পষ্ট। ত্রৈলোক্যনাথ তৎসম শব্দ বহুল ভাষা কোথাওই যে ব্যবহার করেননি তা নয়; কিন্তু প্রধানত তদ্ভব দেশী এবং কিছু বিদেশী শব্দ মিলিয়েই তাঁর ভাষারূপসৃষ্ট। ....তাঁর ভাষা ও অনাড়ম্বর এবং গতিসম্পন্ন। কানে শোনা গল্পের মেজাজটি তাই টের পাওয়া যায়। সাধু ভাষার কাঠামো বজায় রেখে ত্রৈলোক্যনাথ একেবারেই চলিতচালের গদ্য রচনা করেছেন। মৌখিক রীতি এবং লৌকিক ভাব ভঙ্গিই এ ভাষায় প্রধান”।২৪
রচনার মূল কাহিনিতে পাওয়া যায়, পরিবারের কর্তা নেশাখোর মদ্যপানে আসক্ত, স্ত্রীর প্রতি নয়, সাত বছরের ললিত, পাঁচ বছরের কন্যা লাবণ্যের প্রতিও তার কোনো আন্তরিকতা ছিল না। সে ছেলের পুরস্কার পাওয়া বই, মেয়ের হাতের বালা খুলে নিয়ে বিক্রি করে মদ্যপান করে। বাড়ির বাইরে রাত কাটায়, নিজের সম্পত্তি আর আসাম থেকেআসা ভাইয়ের টাকা শেষ করে পরিবারটিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। একদিন বাইরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অপমানিত হয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে। সেইদিন আফিমখেয়ে পরিবারের সকলকে আপন করে নিতে চায়। স্নেহ ও অনুতপ্ত হয়েবলে যায়- “এতদিন আমি অন্ধও পাগল হইয়াছিলাম; তোমরা আমাকে ক্ষমা কর”।২৫ গৃহকর্তার জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের এই আত্মক্ষালন তার জীবনে গভীর অনুশোচনাবোধ জাগরিত করে।
এককথায় লেখকের বর্ণনা সাধুরীতির। সংলাপ চলিত ভাষার অনুসারী। বর্ণনা সাবলীল, সহজ-সরল ও হৃদয় অনুসারী। কঠিনতা নেই; রূপক ব্যাঞ্জনার ঘোর-প্যাচ নেই। বুদ্ধির চেয়ে আবেগের প্রাধান্য বেশি। আবেগের প্রাধান্যে গল্প শেষে কোনো গভীর অর্থকেও ব্যাঞ্জিত করে না। তবে স্বাভাবিক ঘটনাক্রমে এক করুণ আবেশের সৃষ্টি করে। যা পাঠক হৃদয়কে ভাবিত করে তোলে।
আট.
বাংলা সাহিত্যে একদিকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মাঝে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। গল্প রচনায় কখনও বৈঠকি চালে কখনও ঐন্দ্রজালিক ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে লেখক পুরোপুরি পশ্চিমের ভাবধারার বাইরে গিয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছেন। নিজেকে সাহিত্য অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন স্বতন্ত্র মহিমায়। তিনি শুধু গল্প রচনাই করেন না, গল্পও বলে চলেন এবং গল্পের শেষে আরো কিছু বলতে চান যার মধ্য দিয়ে পাঠক গল্পটিকে আত্মস্ত করে ফেলেন। তার মূলে কাজ করে “ত্রৈলোক্যনাথের ব্যক্তি ও কর্মজীবন, বাস্তব জীবনের করুণা, সুখ-দুঃখের সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক বোধে এমনভাবে গড়ে উঠেছিল, যা তাঁর শিল্পপ্রয়াসে গভীর ছায়াপাতে সক্রিয় থেকেছে। তার গল্পগুলি যে মানবিক মঙ্গলবোধ, আদর্শ চিন্তা, মানবতাবাদের পরিশীলনে অন্যদের থেকে সাহিত্যমূল্যে স্বতন্ত্র আসন পায়, তাঁর কারণ শিল্পী লোলোক্যনাথের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি”।২৬
*****************************************
তথ্যসূত্রঃ
১. গঙ্গোপাধ্যায়, নারায়ণ ‘বাংলা গল্পবিচিত্রা’, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রা. লি. ১৪ বঙ্কিম চাটুর্জ্জে স্ট্রিট, কলকাতা- ১২, মাঘ ১৩৬৪, পৃষ্ঠা-১২।
২. দত্ত, বীরেন্দ্র, ‘বাংলা ছোটগল্পঃ প্রসঙ্গ ও প্রকরণ’, পুস্তক বিপণি, ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কল্কাতা-৯, জানুয়ারি ২০০৯, পৃষ্ঠা- ৩৪।
৩. মুখোপাধ্যায়, অরুণকুমার, ‘কালের পুত্তলিকা বাংলা ছোটগল্পের একশ বিশ-২০১০’ দে’জ পাবলিশিং, জুন ২০১৫, পৃষ্ঠা- ১২৮।
৪. চক্রবর্তী, নটবর, ‘ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় মুক্তামালা’, বঙ্গবাসী আপিস, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৩১, প্রকাশের নিবেদন, পৃষ্ঠা সংখ্যা নেই।
৫. পাত্র, প্রফুল্লকুমার, (সম্পাঃ) ‘ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী (তিন খণ্ড একত্রে সমগ্র রচনা, অখণ্ড সংস্করণ), পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২ শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, এপ্রিল- ১৯৫৭, পৃষ্ঠা- ৭২৭।
৬. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৮।
৭. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭৩০।
৯. মিশ্র, আশোককুমার, ‘সাহিত্যের রূপরীতি কোষ’, সাহিত্য সঙ্গী, ১১এ, বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলকাতা-৭৩, অক্টোবর ২০০২, পৃষ্ঠা- ১৮৮।
১০. মজুমদার, উজ্জ্বলকুমার, ‘সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ২০০৩, পৃষ্ঠা-১২২
১১. পাত্র, প্রফুল্লকুমার, (সম্পাঃ) ‘ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী (তিন খণ্ড একত্রে সমগ্র রচনা, অখণ্ড সংস্করণ), পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২ শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, এপ্রিল- ১৯৫৭, পৃষ্ঠা- ৭৩০।
১২. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৮।
১৩. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৯।
১৪. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৯।
১৫. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭৩২।
১৬. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৮।
১৭. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৯।
১৮. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭২৯।
১৯. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭৩০।
২১. পাত্র, প্রফুল্লকুমার, (সম্পাঃ) ‘ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী (তিন খণ্ড একত্রে সমগ্র রচনা, অখণ্ড সংস্করণ), পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২ শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, এপ্রিল- ১৯৫৭, পৃষ্ঠা- ৭২৭।
২২. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ৭৩০।
পৃষ্ঠা- ১১৭।
পৃষ্ঠা- ১২৩।
২৫. পাত্র, প্রফুল্লকুমার, (সম্পাঃ) ‘ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী (তিন খণ্ড একত্রে সমগ্র রচনা, অখণ্ড সংস্করণ), পাত্র’জ পাবলিকেশন, ২ শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, এপ্রিল- ১৯৫৭, পৃষ্ঠা- ৭৩০।
২৬. দত্ত, বীরেন্দ্র, ‘বাংলা ছোটগল্পঃ প্রসঙ্গ ও প্রকরণ’, পুস্তক বিপণি, ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কল্কাতা-৯, জানুয়ারি ২০০৯, পৃষ্ঠা- ৩৪।
সহায়ক গ্রন্থাবলীঃ
১. ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ‘ত্রৈলোক্যনাথ রচনাবলী (তিন খণ্ড একত্রে সমগ্র রচনা, অখণ্ড সংস্করণ) সম্পাদনাঃ প্রফুল্লকুমার পাত্র, পাত্রজ পাবলিকেশন, ২ শ্যামাচরণ স্ট্রিট, কলকাতা-৭৩, এপ্রিল- ১৯৫৭।
২. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় ‘কালের পুত্তলিকা বাংলা ছোটগল্পের একশ বিশ-২০১০’ দে’জ পাবলিশিং, জুন ২০১৫।
৩. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, ‘বাংলা গল্পবিচিত্রা’, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রা. লি. ১৪ বঙ্কিম চাটুর্জ্জে স্ট্রিট, কলকাতা- ১২, মাঘ ১৩৬৪।
৪. আশোককুমার মিশ্র, ‘সাহিত্যের রূপরীতি কোষ’, সাহিত্য সঙ্গী, ১১এ, বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীট, কলকাতা-৭৩, অক্টোবর ২০০২।
৫. উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, ‘সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি’, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ২০০৩।
******************************************************************************
No comments