বৈষ্ণবী মায়া :: বৃন্দাবন দাস
বৈষ্ণবী মায়া
বৃন্দাবন দাস
---------------------------------------------------------------------------------
বৈষ্ণবী মায়া কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো। প্রশ্নের মান-
৪/৫
উত্তরঃ বৃন্দাবন দাস রচিত ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থের
তৃতীয় অধ্যায়ের “বৈষ্ণবী মায়া” পদটিতে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের উদগাতা, প্রাণপুরুষ
শ্রীচৈতন্যদেবের একটি বাল্যলীলার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
একদিন স্বর্ণালঙ্কারের
লোভে দুই চোর শিশু
শ্রীচৈতন্যদেবের স্বর্ণালঙ্কার চুরি করার পরিকল্পনা করে। ফলস্বরূপ তারা
প্রভুকে বাবা, বাছা সম্মোধন করে কোলে তুলে নেয়। নিজেদের গোপন ডেরার
উদ্দেশে যাত্রা করে। পথের অগণিত মানুষ ভাবল যার শিশু সেই নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অন্তর্যামী
মহাপ্রভু সবই জানে। তাই তিনি চোরের কাঁধে বসে স্মিত হাসি হাসেন। কিন্তু বিষ্ণুর
মায়ায় ভুলে নানা স্থানে ঘুরে শেষে তারা নিমাইয়ের পিতা জগন্নাথ মিশ্রের বাড়িতে
এসে হাজির হয়। নিমাইও চোরের কোল থেকে নেমে হাসতে হাসতে বাবার কোলে গিয়ে ওঠেন। প্রভুকে পেয়ে সবাই হরি হরি বলে উঠেন। এই ঘটনাটির মধ্যে দিয়ে চৈতন্যদেবের অবতাররূপকে তুলে
ধরা হয়েছে। এ যেন এক অকল্পনীয় মায়াময় ঘটনা। তাঁর দৈবিক গুণে অনর্থের
হাত থেকে বেঁচে যায়।
কবিতার বিস্তারিত আলোচনা পেতে ক্লিক করুন এখানেঃ
https://youtu.be/MhCidh-mrqQ
https://youtu.be/X2FVuwYBVXA
https://youtu.be/MhCidh-mrqQ
https://youtu.be/X2FVuwYBVXA
১। অতি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নের মান-১/২
ক) চৈতন্যভাগবত গ্রন্থটি কে রচনা করেছেন?
উত্তরঃ বৃন্দাবন দাস চৈতন্যভাগবত গ্রন্থটি রচনা করেছেন।
খ) ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কবিতাটিতে কার বাল্যলীলা বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কবিতাটিতে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের
বাল্যলীলা বর্ণনা করা হয়েছে।
গ) বৃন্দাবন
দাসের মায়ের নাম কি?
উত্তরঃ বৃন্দাবন দাসের মায়ের নাম হল নারায়ণীদেবী।
ঘ) “প্রভুর শ্রীঅঙ্গে দেখে দিব্য অলঙ্কার” এখানে প্রভু বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে প্রভু বলতে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যকে বোঝানো হয়েছে।
ঙ) মহাপ্রভু
শ্রী চৈতন্যের বাল্য নাম কী?
উত্তরঃ মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের বাল্য নাম হল নিমাই।
২। সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নের মান-৩/৪
ক) চৈতন্যদেবের পিতা-মাতার নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ চৈতন্যদেবের পিতা জগন্নাথ মিশ্র এবং মাতা হল শচীদেবী।
খ) দুই চোর নিমাইকে কেন হরণ করেছিল? তাদের
অভিপ্রায় কি পূর্ণ হয়েছিল?
উত্তরঃ নিমাইয়ের শরীরে সোনার অলংকার দেখে দুই চোর অলঙ্কারগুলো
চুরি করার জন্য নিমাইকে হরণ করেছিল।
তাদের অভিপ্রায় পূর্ণ হয়নি। কেননা চোর দুটি
যখন শিশু নিমাইকে হরণ করে কাঁধের উপর বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন অন্তর্যামী শিশু নিমাইয়ের বৈষ্ণবী মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে পরে। বিষ্ণুর
মায়ায় ভুলে নানা স্থানে ঘুরে শেষে তারা নিমাইয়ের পিতা জগন্নাথ মিশ্রের বাড়িতে
এসে হাজির হয়। নিমাইও চোরের কোল থেকে নেমে হাসতে হাসতে বাবার কোলে গিয়ে ওঠেন। এভাবে
চোরেদের অভিসন্ধি ব্যর্থ হয়।
গ) নিমাইকে
হরণ করার পর নবদ্বীপবাসীর মনের অবস্থা কী হয়েছিল?
উত্তরঃ দুই চোর নিমাইয়ের শরীরে সোনার অলঙ্কার দেখে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। মহাপ্রভুকে তুলে নিয়ে গোপন ডেরার উদ্দেশে রওনা দেয়। অন্তর্যামী মহাপ্রভুও পরম আনন্দে
চোরেদের সাথে চলতে থাকে। পথের অগণিত মানুষ ভাবে যার শিশু সে নিয়ে যায়। অন্যদিকে জগন্নাথ মিশ্রের বাড়িতে সকলে দীর্ঘক্ষন
মহাপ্রভুকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের কেউ কেউ তার
নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। অনেকে এদিক সেদিক খুঁজে না পেয়ে শেষপর্যন্ত শ্রী কৃষ্ণের স্মরনাপন্ন হয়ে পরে। পরিবারের নয়নমণি মহাপ্রভুর অদর্শনে
প্রত্যেকে অস্থির ও ব্যকুল হয়ে পরে। কবি তাদের সেই অস্থির ও ব্যাকুলতাকে
জলহীন মাছের সঙ্গে তুলনা করেছে।
৩। দীর্ঘ প্রশ্ন
উত্তর প্রশ্নের
মান-৪/৫
ক) সপ্রসঙ্গ
ব্যাখ্যা করো
“জল
বিনা যেন হয় মৎসের জীবন”
উত্তর: আলোচ্য অংশটি বৃন্দাবন দাস রচিত ‘শ্রী চৈতন্য ভাগবত’ কাব্যের আদি
খন্ডের অন্তর্গত বৈষ্ণবী মায়া কাব্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
জল ছাড়া মাছ যেমন
বাঁচতে পারে না, ছটফট করে, অস্থির হয়ে উঠে। তেমনি মহাপ্রভুকে ছাড়া তার পরিবার পরিজনেরা অস্থির ও ব্যাকুল হয়ে পরেছে।
মহাপ্রভুকে ছাড়া তার পরিবার পরিজনদের অস্থির অবস্থা প্রসঙ্গে কবি এই উপমাটি ব্যবহার করেছেন।
দুই চোর শিশু শ্রীচৈতন্যের শরীরে সোনার অলঙ্কার
দেখে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। মহাপ্রভুকে
তুলে নিয়ে গোপন ডেরার উদ্দেশে রওনা দেয়। অন্তর্যামী মহাপ্রভুও পরম আনন্দে
চোরেদের সাথে চলতে থাকে। অন্যদিকে জগন্নাথ
মিশ্রের বাড়িতে সকলে দীর্ঘক্ষন মহাপ্রভুকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের কেউ কেউ তার
নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে। অনেকে এদিক সেদিক খুঁজে না পেয়ে শেষপর্যন্ত শ্রী কৃষ্ণের স্মরনাপন্ন হয়ে পরে। পরিবারের নয়নমণি মহাপ্রভুর অদর্শনে
প্রত্যেকে অস্থির ও ব্যাকুল হয়ে পরে। তাদের
সেই অস্থির ও ব্যাকুলতাকে তুলে ধরতে ‘জল বিনা হয় যেন মৎসের জীবন’ উপমাটি
ব্যাবহার করেছেন।
খ) কাব্যটির
নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামকরণ সাহিত্যকে
পূর্ণতা দান করে। তাৎপর্য বহন করে আনে। বৃন্দাবন দাস রচিত ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ কাব্যের অন্তর্গত ‘বৈষ্ণবী মায়া’ কাব্যাংশটি একটি চরিত্রকে কেন্দ্র
করে রচিত হলেও এক অলৌকিক কাহিনিকে ইঙ্গিতবহ করে তোলে।
দুই চোর শিশু শ্রীচৈতন্যদেবের স্বর্ণালঙ্কার চুরি করার পরিকল্পনা
করে। ফলস্বরূপ তারা প্রভুকে বাবা, বাছা সম্মোধন করে
কোলে তুলে নেয়। নিজেদের গোপন ডেরার উদ্দেশে যাত্রা করে। পথের অগণিত
মানুষ ভাবল যার শিশু সেই নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অন্তর্যামী
মহাপ্রভু সবই জানে। তাই তিনি চোরের কাঁধে বসে স্মিত হাসি হাসেন। কিন্তু বিষ্ণুর
মায়ায় ভুলে নানা স্থানে ঘুরে শেষে তারা নিমাইয়ের পিতা জগন্নাথ মিশ্রের বাড়িতে
এসে হাজির হয়। নিমাইও চোরের কোল থেকে নেমে হাসতে হাসতে বাবার কোলে গিয়ে ওঠেন। এই ঘটনাটির মধ্যে
দিয়ে চৈতন্যদেবের অবতাররূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ যেন
এক অকল্পনীয় মায়াময় ঘটনা। তাঁর দৈবিক গুণে
অনর্থের হাত থেকে বেঁচে যায়।
তিনি ছিলেন বিষ্ণুর
অবতার ও পরম বৈষ্ণব। চৈতন্যদেব
বিষ্ণুর আশির্বাদ লাভ করে দিব্যমায়া বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। চোরেদের মনের দূরভিসন্ধি সফল হতে দেয়নি। সমগ্র ঘটনাটা বিষ্ণুর মায়া বা লীলার কারণে ঘটায় কাব্যাংশটির নামকরণ “বৈষ্ণবী মায়া” সার্থকতা লাভ করেছে।
***************************************************
No comments