Header Ads

‘অন্নদার আত্মপরিচয়’ কবিতাটির বিষয় সংক্ষেপ

 

অন্নদার আত্মপরিচয়

রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র

কবি পরিচিতিঃ

কবি ভারতচন্দ্র রায় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় নাম তিনি ছিলেন মধ্যযুগের শেষ শ্রেষ্ঠ কবি হাওড়া জেলার ভুরসুট পরগনার পেড়ো বসন্তপুর গ্রামে কবির আদি নিবাস বাবার নাম নরেন্দ্রনারায়ণ এরা ছিলেন অবস্থাপন্ন জমিদার আনুমানিক ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতচন্দ্রের জন্ম শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন পড়াশোনায় আগ্রহী বাংলা ও সংস্কৃত ছাড়াও তিনি ফরাসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে রামচন্দ্র মুন্সির কাছে তিনি ফরাসি ভাষা শেখেন।

সম্পন্ন পরিবারের সন্তান হলেও কবির জীবন খুব সুখে কাটেনি বর্ধমান রাজার সঙ্গে বিরোধের ফলে পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় রাজার সঙ্গে বৈষয়িক বিরোধ মেটাতে গেলে বর্ধমানের রাজার হুকুমে ভারতচন্দ্র কারারুদ্ধ হন পরে মুক্তি পেয়ে তিনি সন্ন্যাসী হয়ে দেশ দেশান্তর ভ্রমণ করেন পুরীতে থাকবার সময় আকস্মিকভাবে চন্দন নগর নিবাসী ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং তাকে বাংলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তাঁর অসাধারণ কবিত্বশক্তি প্রতিভার পরিচয় পেয়ে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে তার যোগসুত্র তৈরি করে দেয় কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন সাহিত্য ও কাব্যের উৎসাহদাতা ভারতচন্দ্রকে তিনি রাজসভার কবি হিসেবে নিযুক্ত করেন। রাজার অনুরোধে রচনা করেন বিখ্যাত অন্নদামঙ্গল কাব্যটি। এই কাব্যটি রচনা করে কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর উপাধি দ্বারা সম্মানিত হন এই কাব্যটি ‘নূতন মঙ্গল নামে চিহ্নিত হয়।

অন্নদামঙ্গল কাব্য ছাড়াও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ গুলি হল সত্যপীরের কথা’, রসমঞ্জরী’, নাগাষ্ট এবং বিদ্যাসুন্দর’। অবশেষে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতচন্দ্রের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই অনুমান করেন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অবসান হয়



Ø অন্নদার আত্মপরিচয় কবিতাটির বিষয় সংক্ষেপ

দ্মবেশীনি দেবী অন্নদা গাঙ্গিনী নদীর তীরে উপস্থিত হয়। নদী পার হওয়ার জন্য পাটনীকে ডাকেন। পাটনী নারী কণ্ঠস্বর শুনে দ্রুত নৌকা নিয়ে এলো কিন্তু সঠিক পরিচয় না পেলে একাকিনী কুলবধুকে সে পার করে কোন বিপদে পড়তে চায় না। বাধ্য হয়ে ছদ্মবেশিনী দেবী সবিশেষে- বিশেষণে নিজের পরিচয় দিয়েছে।

তার পিতা মুখোপাধ্যায় বংশজাত। স্বামী বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের কুলীন। পিতামহ তার নাম দিয়েছে অন্নপূর্ণা। তার স্বামী অনেক বিয়ে করায় তার প্রতি বিরূপ তার স্বামী অত্যন্ত বৃদ্ধ এবং নেশা ভান খেতে দক্ষ তার স্বামী গুনহীন। সবসময় তার সঙ্গে ঝগড়া করে। গঙ্গা নামে সতিনকে ভালোবাসে, তাকে শিরোমণি করে রাখে। ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ানো এমন স্বামীর সঙ্গে তাকে বিয়ে দিয়েছে এই জন্য অভিমান করে তার ভাই সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে। এখন যে তাকে ভালবাসে, সে তারই ঘরে যায়। সহজ সরল পাটনী এই পরিচয় পেয়ে নৌকায় উঠে আসতে বলেছে।

কিন্তু দেবীর আত্মপরিচয় দ্ব্যর্থক ছিল। প্রকৃত পরিচয়টি হল, পর্বত শ্রেষ্ঠ হিমালয় তার পিতা স্বামী সকলের বন্দনীয় মহাদেব পিতামহ দেবাদিদেব ব্রহ্মা তার নাম দিয়েছে অন্নপূর্ণা। সকলের প্রভু বামদেব তার স্বামী। অনন্তকাল থেকে মুক্তিলাভে সিদ্ধ পুরুষ। পৃথিবী সম্বন্ধীয় কথায় নীলকণ্ঠ শিব অন্নপূর্ণার সাথে সবসময় আলোচনা করে। গঙ্গা নামে একটি স্রোতস্বিনীকে মাথায় ধারণ করেছে। পাথরের মতো কঠিন পিতা হিমালয় এই রকম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। আর হিমালয়ের অংশ মৈনাক ইন্দ্রের ভয়ে সমুদ্রে ডুবে গেছে দেবী তাকে ভাই বলে সম্বোধন করেছে। এখন যেই তাকে ভালোবাসে বা আরাধনা করে সে তার ঘরেই যায়।

সব কিছু শুনে পাটনী তাকে নৌকায় বসতে বলে। এবং তার পায়ের স্পর্শে কাঠের সেঁউতি সোনায় পরিণত হয়। তা দেখে ঈশ্বরী পাটনীর মনে হয়- “এ ত মেয়ে মেয়ে নয় দেবতা নিশ্চয়”। ফলে নদীপাড়ে পৌঁছে ভীত সন্ত্রস্ত পাটনীকে দেবী তাকে বর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.