‘প্রুফ রিডিং’ : ড. পরিতোষ রায়
পাণ্ডুলিপি কাকে বলে?
কোনো কিছু প্রকাশ করার প্রবণতা মানুষের সহজাত অভ্যাস। সাহিত্যের ক্ষেত্রে বা প্রকাশনা সংস্থায় যিনি লেখালেখি করেন তিনিই লেখক। তাঁর হাতে লেখা মূল কপিকে পাণ্ডুলিপি বলে।
কম্পোজ ম্যাটার কাকে বলে?
পাণ্ডুলিপিকে প্রকাশ করার জন্য লেখক প্রকাশনা দপ্তরে পাঠিয়ে দেন । প্রকাশক তা ছাপার জন্য বর্তমানে কম্পিউটারে ছাপার জন্য মূদ্রণে পাঠিয়ে দেন। সেই সঙ্গে হরফ ব্যবহারের নির্দেশাদি দিয়ে দেন। এরপর কম্পোজিটার ম্যাটার তৈরি করেন।
কম্পোজিটারের তৈরি ম্যাটারকে কম্পোজ ম্যাটার বলে।
‘প্রুফ রিডিং’ কাকে বলে?
কম্পোজ ম্যাটারে কোনো ভুল ত্রুটি আছে কিনা, ছাপার আগে যাচাই
করে নেওয়া হয়। যাচাই করার সময় নির্ধারিত কিছু সংকেত ব্যবহার করে ভুল ত্রুটিকে নির্দেশ
করা হয়। কম্পোজ ম্যাটারে ভুল ত্রুটিকে নির্দেশ করার এই বিশেষ পদ্ধতিকে ‘প্রুফ সংশোধন’
বলে। অর্থাৎ সংবাদ পত্র, পত্রিকা, বই বা মূদ্রণ প্রকাশনার জন্য ছাপার আগে কম্পজিং এ
ভুল ত্রুটি যাচাই করার বিশেষ পদ্ধতিকে ‘প্রুফ সংশোধন’ বলে।
প্রুফ সংশোধন এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘প্রুফ রিডিং’। প্রকাশনা
সংস্থায় প্রুফ সংশোধন এর পরিবর্তে ‘প্রুফ রিডিং’ শব্দটিই বেশি জনপ্রিয়।
‘প্রুফ রিডিং’ এর প্রয়োজনিতাঃ
যে কোনো প্রকাশনার জন্য ‘প্রুফ রিডিং’ প্রয়োজন। কারন ভুল বানান বা লেখার ধরণের নানান ভুল ত্রুটিকে সংশোধন করতে ‘প্রুফ রিডিং’ অবশ্যই প্রয়োজন। কেননা ভুল বানানে প্রকাশনা সংস্থার যেমন বিশ্বাস যোগ্যতা নষ্ট হয় তেমনি লেখক সম্পর্কে খারাপ বার্তা যায়। এতে পাঠকের পাশাপাশি লেখক ও প্রকাশনা সংস্থা উভয়েরই ক্ষতি হয়। এইসব কারনে ‘প্রুফ রিডিং’ অত্যন্ত প্রয়োজন হয়।
প্রুফ রিডার কাকে বলে? তাঁর কাজ কী?
এককথায় যিনি ‘প্রুফ
রিডিং’ এর কাজ করেন তিনি প্রুফ রিডার। অর্থাৎ কম্পোজিং এর পর কম্পোজম্যাটারের ভুল ত্রুটি
যাচাই করে যিনি সংশধোন করে দেন তিনিই প্রুফ রিডার। ভুল ত্রুটিহীন মূদ্রণ প্রকাশ করতে
প্রুফ রিডারের দায়িত্ব অনেক বেশি।
বই প্রকাশনা সংস্থায় বা সংবাদপত্রের অফিসে এক বা একাধিক প্রুফ
রিডার থাকে। তারা ছেপে প্রকাশের আগে ভুল ত্রুটি যাচাই করে মূদ্রণে পাঠায়। তবে বর্তমানে
কম্পিউটারের যুগে এদের চাহিদা একটু কমে গেছে। ভুল ত্রুটি এখন কম্পিউটারে দেখার প্রচলন
হয়েছে।
প্রুফ রিডিং
এ প্রুফ রিডারের দক্ষতা বা গুণাবলী
একটি ভালো ত্রুটি শূণ্য মূদ্রণে প্রুফ রিডারের ভুমিকা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। অতএব প্রকাশনায় প্রুফ রিডিং এ প্রুফ রিডারকে বিশেষ বিশেষ দিকে নজর দিতে
হয়। সে জন্য প্রুফ রিডারের বিশেষ দক্ষতা বা গুণাবলীর প্রয়োজন হয়। সেগুলি নিচে দেওয়া
হল –
ক) পেশাগত আগ্রহ ও জ্ঞান থাকতে লাগবে।
খ) ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে।
গ) ভাষার বানান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
ঘ) ভাষার ব্যকরণের উপর বিশেষ দক্ষতা ও সচেতনতা থাকতে হবে।
ঙ) ভাষার বাক্য ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে।
ছ) প্রকাশনা ও সম্পাদনা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
জ) প্রুফ রিডিং এর চিহ্ন গুলি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
প্রুফ রিডারকে যা দেখতে হয়
ক) ভুল বানান
খ) ভুল যতি চিহ্ন
গ) শব্দগত ভুল
ঘ) শব্দ থেকে শব্দের দুরত্ব
ঙ) টাইপিং এর ভুল ত্রুটি
চ) ইংরেজি টাইপের ক্ষেত্রে বর্ণগত ব্যবহার
ছ) তারিখ ও সালের ব্যবহার
জ) মূল টেক্সট বা পাণ্ডুলিপির সঠিক ব্যবহার
ঝ) প্যারাগ্রাফ
ঞ) পাতার ক্রমিক সংখ্যা
ইত্যাদি ।
প্রুফ রিডিং এর নীতিমালা
১৮৫৮ সালের ১২ই জুলাই ইন্ডিয়ান স্টান্ডার্ড ইনস্টিতিউট, বর্তমানে
যার নাম বিউরো অফ ইন্ডিয়ান স্টানডার্ডস আলোচনা এবং বিতর্কের মাধ্যমে প্রুফ সংশোধনের
কিছু নিয়মাবলীর কথা বলেছে। মূলত এই নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে প্রকাশক, মূদ্রক এবং লেখকরা
প্রুফ সংশোধন করে থাকেন।
বিউরো অফ ইন্ডিয়ান স্টানডার্ড অনুসারে প্রুফ সংশোধনের ৭৫টি
চিহ্ন ও প্রতীকগুলি হল –
ক) সাধারণ - ১২টি।
খ) যতিচিহ্ন – ২৫টি।
গ) স্থানের কমানো বাড়ানো
- ১২টি।
ঘ) সমতা – ১৬টি।
ঙ) হরফ – ১০টি।
No comments