মাস্টারমহাশয় :: প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
মাস্টারমহাশয়
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
১. অতি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. ক)
মাস্টারমহাশয়
ছোট গল্পটির লেখক কে?
উত্তরঃ
মাস্টারমহাশয়
ছোট গল্পটির লেখক হলেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।
১. খ)
হীরু দত্ত কে?
উত্তরঃ
হীরু দত্ত গোঁসাইগঞ্জ গ্রামের অভিভাবকস্থানীয়
মাতব্বর।
১. গ)
রামচরণ
‘হুস্কুল’ বলতে সবাইকে কী বুঝিয়েছিলেন?
উত্তরঃ রামচরণ
‘হুস্কুল’ স্কুল বা বিদ্যালয়কে বুঝিয়েছিলেন।
১. ঘ)
নন্দীপুর
স্কুলের মাস্টারের নাম কী?
উত্তরঃ নন্দীপুর
স্কুলের মাস্টারের নাম হারান চক্রবর্তী।
১. ঙ)
গোসাইগঞ্জ
স্কুলের মাস্টারের নাম কী?
উত্তরঃ
গোসাইগঞ্জ স্কুলের মাস্টারের নাম ব্রজগোপাল
মিত্র।
২. অতিরিক্ত
প্রশ্নোত্তর
২. ক)
ঢপ সংগীত কী?
উত্তরঃ ঢপ
সংগীত
বাংলাদেশে প্রচলিত একপ্রকার লোকসংগীত। সাধারণত রাধাকৃষ্ণ লীলা বিষয়ক গান।
যে মহিলারা এই গান গায় তাকে ঢপওয়ালি বলে।
২. খ)
নন্দীপুরের
মাস্টারমহাশয়ের বাড়ি কোথায় ছিল?
উত্তরঃ
নন্দীপুরের মাস্টারমহাশয়ের বাড়ি
বর্ধমানে ছিল।
২. গ)
অন্নপূর্ণা
পূজা কোন মাসে হয়?
উত্তরঃ
অন্নপূর্ণা পূজা চৈত্র মাসে হয়।
২. ঘ)
বিচার
সভা কবে বসে ছিল?
উত্তরঃ বৈশাখী
পূর্ণিমার দিন সূর্যাস্তের সময় বিচারসভা বসেছিল।
৩. সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নোত্তর
৩. ক)
“উভয় মাস্টারের পরস্পরের প্রতি
এই তীব্র অপবাদ প্রয়োগের ফল এই
হইল, উভয় গ্রামই স্ব স্ব মাস্টারের
অসাধারন পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে সন্দিহান হইয়া উঠিল” –
i) উভয়
মাস্টার কে কে?
ii) উভয়
গ্রামই – কোন কোন গ্রাম?
উত্তরঃ i)
এখানে
উভয় মাস্টার হলেন নন্দীপুর গ্রামের হারান
চক্রবর্তী এবং গোঁসাইগঞ্জের ব্রজগোপাল মিত্র।
ii) উভয়
গ্রামই – বলতে নন্দীপুর গ্রাম ও গোঁসাইগঞ্জ
গ্রামকে বোঝানো হয়েছে।
৩. খ) “সব খবরই
নিয়ে এসেছি” --- এখানে সব খবরই বলতে কোন খবরকে বোঝানো
হয়েছে? উত্তরঃ এখানে সব খবরই বলতে নন্দীপুর গ্রামে নতুন
স্কুল বা বিদ্যালয় বসানোর কথা বলা হয়েছে।
নন্দী
পুর গ্রাম বর্ধমান থেকে ইংরেজী জানা শিক্ষক এনে স্কুল খুলেছে তার বেতন কত এইসব
বিস্তারিত খবর কি সব খবর বলা হয়েছেতুই
গ)
ব্রজগোপাল মিত্র পুর্বে কোথায় কাজ করতেন?
উত্তরঃ
ব্রজগোপাল মিত্র পূর্বে বড় বাজারের এক মহাজনের আড়তে সাত
টাকা বেতনের বিনিময়ে খাতা লেখার কাজ করতেন।
ঘ) হীরু দত্তের
সঙ্গে কারা বারোয়ারি অন্নপূর্ণা পূজা নির্বাহের আলোচনা করছিল?
উত্তরঃ হীরু দত্তের
সঙ্গে তাঁর প্রতিবেশী গোঁসাইগঞ্জের দুজন
সম্পন্ন প্রজা শ্যামাপদ মুখুজ্জ্যে ও কেনারাম মল্লিক আসন্ন
বারোয়ারি অন্নপূর্ণা পূজা নির্বাহের বিষয়ে আলোচনা
করছিল।
ঙ) হীরু
দত্ত গ্রামের লোকেদের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? এবং সেই প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি
কী করেছিলেন?
উত্তরঃ
হীরু দত্ত গ্রামের লোকেদের কাছে তিন সত্যি করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি প্রাণ থাকতে
কখনও গোঁসাইগঞ্জকে নন্দীপুরের কাছে হেরে যেতে দেবেন না। তিনি সেই দিনই কলিকাতা যাবেন
এবং এক সপ্তাহের মধ্যে নিজের চণ্ডীমণ্ডপে ইস্কুল বসাবেন।
কথামতো সেই দিনই তিনি রেলগাড়ি চড়ে কলিকাতা গেলেন। চার দিন পর
তিনি মাস্টার নিযুক্ত করে ফিরে এলেন। সঙ্গে নিয়ে এলেন স্লেট, পেন্সিল, স্পেলিং বুক
ইত্যাদি।
৪. রচনাধর্মী
প্রশ্ন উত্তরঃ
ক) ব্রজ
মাস্টারের ইংরেজি জ্ঞানের সম্যক পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ব্রজ
মাস্টার গোসাইগঞ্জের স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত
হলেন। তার পুরো নাম ব্রজগোপাল মিত্র। তিনি ইংরেজি বলা ও লেখায় দক্ষ ছিলেন। মাঝে
মাঝে লোকেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ইংরেজি কথা মিশিয়ে ফেলতেন। একদিন
কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে পথে এক সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়। তার
সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বার্তা হয়। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা সাহেবকে
জানায়। লাটসাহেব তখন ব্রজমাস্টারকে
ডেকে নেয়। তার ইংরেজি কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে ডেপুটি
কালেক্টরের চাকরি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু
ব্রজ মাস্টার তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অন্যদিকে
নন্দীপুর হারান মাস্টারের কাছে জানা যায়, সে
সেকেন্ড ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে। সে
পড়াশোনায় মূর্খ ছিল। কলকাতার বড় বাজারে সাত টাকা
মাইনে এক মহাজনের আড়তে কাজ করতো।
খ) “কিন্তু
উভয় গ্রামের লোকই ইংরেজিতে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। সুতরাং
যাহাতে জয়-পরাজয় সম্বন্ধে কাহারো মনে কিছুমাত্র সংশয় না থাকে, এমন
একটি সরল বিচার প্রণালী স্থির করা আবশ্যক”। --
এই
সরল বিচার প্রণালী কী?
উত্তরঃ দামোদর
নদের কাছে দুই গ্রাম নন্দীপুর ও গোসাইগঞ্জ। পরস্পর প্রতিযোগিতায়
স্কুল বসিয়েছে। স্কুলের জন্য ইংরেজি জানা মাস্টারমশায় এনেছে। কিন্তু
মাস্টার মহাশয়দের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে গ্রামের বাসিন্দারা তাদের
জ্ঞান গরিমা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে। তখন
গ্রামের মাতব্বররা কে বেশি জ্ঞানী তা বিচার করার জন্য একটি সরল বিচার
প্রণালী স্থির করলেন। সরল বিচার
প্রণালী হল - আগামী বৈশাখী পূর্ণিমার দিন সূর্যাস্তের
সময় গ্রামের সীমান্তে থাকা বটবৃক্ষের নিচে বিচার সভা বসবে।
গ্রামবাসীদের সামনে দুই মাস্টার মশায় পরস্পর পরস্পরকে
একটি ইংরেজি কথার মানে জিজ্ঞাসা করবেন। তারা উভয়ে উভয়কে কথাটির মানে বলবেন। যদি উভয়ই
উত্তর
দিতে সক্ষম হন তাহলে উভয়কে জ্ঞানী বলে মানা হবে। আর যে উত্তর দিতে পারবেনা
সে পরাজিত হবে। আর যিনি জয়ী হবেন
তার গলায় জয়মাল্য দেওয়া হবে।
গ) “সৌভাগ্যক্রমে
ব্রজ মাস্টার এই কূট প্রশ্নের অর্থ
অবগত ছিলেন” – ব্রজ মাস্টার কে? এই কূট
প্রশ্নটি কী ছিল এবং তার অর্থ কী?
উত্তরঃ ব্রজ
মাস্টার
হলেন গোসাইগঞ্জ গ্রামের ইংরেজি স্কুলের শিক্ষক। তার
পুরো নাম ব্রজগোপাল মিত্র। বয়স ত্রিশ
বছর, খর্বাকার ও রোগা। কলকাতা নিবাসী ও মিষ্টভাষী।
গ্রামের
বিচারসভায় নন্দীপুরের ইংরেজি মাস্টার হারান চক্রবর্তী প্রথম
প্রশ্ন করার সুযোগ পান। তিনি তার প্রতিপক্ষ অনেক ভেবে
একটি প্রশ্ন করেছিলেন। সেটি হল – “Horns of a
Dilemma”। বাক্যাংশটি একটি ইডিয়ম। এর সরাসরি অর্থ ছিল না। তাই এটি কূট প্রশ্নঃ
ছিল।
এই কূট
প্রশ্নটির অর্থ হল উভয় সংকট।
ঘ) দুই
গ্রামের দুই মাস্টারের চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তরঃ দামোদর
নদের তীরে পাশাপাশি দুই গ্রাম – নন্দীপুর ও গোঁসাইগঞ্জ। দুই
গ্রামই স্কুলের জন্য মাস্টারমহাশয় এনেছে।
নন্দীপুরের মাস্টারমশায় হলেন হারান চক্রবর্তী এবং গোঁসাইগঞ্জের
মাস্টারমহাশয় হলেন ব্রজগোপাল মিত্র। দুজনেই ইংরেজি জানে। তবে দুজনেই
নিজ নিজ দক্ষতার পরিচয় দিতে গিয়ে পরস্পরের নিন্দা করতে লাগলেন।
নন্দীপুরের হারান মাস্টার খুবই সহজ সরল মানুষ;
অন্যদিকে গোঁসাইগঞ্জের মাস্টার ধূর্ত কূটকৌশলী। গ্রামবাসীর
অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কার্যসিদ্ধি করে।
গল্প থেকে জানা যায় দুই মাষ্টার মহাশয়ের ইংরেজি
জ্ঞান খুব একটা ছিল না। বিশেষ
করে ব্রজ মিত্রের। তিনি কৌশলে ‘আই
ডোন্ট নো’ এর উত্তর জানতে চাইলে হারান মাস্টার
সঠিক উত্তর দেয় – ‘আমি জানিনা’। কিন্তু
সহজ-সরল হারান মাস্টারের এই উত্তর শুনে গ্রামবাসীরা বুঝল মাস্টারমশায় এই প্রশ্নের
উত্তর জানেন না। এইভাবে হারান মাস্টার হেরে যায়। ব্রজগোপাল মিত্র জিতে যায়।
ঙ) “ও মো পরদিন
শুনা গেল হারান মাস্টার নন্দীপুর ত্যাগ করিয়া চলিয়া
গিয়াছে”। - যে ঘটনা এই পরিণতি ডেকে এনেছে তা
সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তরঃ দামোদর
নদের তীরে নন্দীপুর ও গোঁসাইগঞ্জ
পাশাপাশি দুটি গ্রাম। তাদের সকল বিষয়ে প্রতিযোগিতা চলত।
নন্দীপুর বর্ধমান থেকে আর গোঁসাইগঞ্জ কলকাতা
থেকে মাস্টারমশাই এনে ইংরেজি স্কুল বসিয়েছে।
কিন্তু
গোলযোগ বাঁধে মাস্টারদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে। তাতে
দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে তাদের ইংরেজি জ্ঞান ও
দক্ষতা সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে। অবশেষে গ্রামের মাতব্বরদের
সহযোগিতায় প্রতিযোগিতার আয়োজন হল। ঠিক হল
দুইজন মাস্টার পরস্পর পরস্পরকে একটি ইংরেজি কথার মানে জিজ্ঞাসা করবে এবং অপরকে তার
মানে বলতে হবে। বিচারের প্রণালী অনুসারে হারান মাস্টার
প্রথম প্রশ্ন করার সুযোগ পায়। জিজ্ঞাসা করে “হর্নস
অফ আ ডিলেমা”র অর্থ কী? ব্রজ
মাস্টার সঠিক উত্তর দেয় “উভয়
সংকট” কিন্তু ব্রজ
মাস্টার ছিল কূটকৌশলী, ধূর্ত প্রকৃতির। ছলনার
আশ্রয় নিয়ে সে প্রশ্ন করে “আই ডোন্ট নো” এর
অর্থ কী? হারান মাস্টারের সঙ্গে সঙ্গে জানায় আমি
জানিনা। অজ্ঞ গ্রামবাসীরা ভাবলো হারান মাস্টার
উত্তর জানেনা। এভাবে ব্রজ
মাস্টার জয়ী হয়। গোঁসাইগঞ্জবাসী আনন্দে
মত্ত হয়ে ওঠে। হারান মাস্টার অপমানিত বোধ করে। অপমানে বিমর্ষ
হয়ে সে পরদিনই নন্দীপুর ত্যাগ করে।
ছ) সপ্রসঙ্গ
ব্যাখ্যা করো।
ক) “আজ থেকে
এক হপ্তার মধ্যে, আমার এই চণ্ডীমণ্ডপে স্কুল বসাব বসাব বসাব -- এই তিন
সত্যি করলাম”।
উত্তরঃ আলোচ্য
অংশটি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘মাস্টারমহাশয়’ গল্প
থেকে নেওয়া হয়েছে। গোঁসাইগঞ্জ স্কুল প্রতিষ্ঠার উপায় জিজ্ঞাসা
করলে গ্রামের মাতব্বর হীরুদত্ত এই কথাগুলো
বলেছিলেন।
রামচরণ মণ্ডল নামে একজন গ্রামবাসী
নন্দীগ্রামে স্কুলে মাস্টার নিযুক্ত করার সংবাদ প্রচার করে। তখন গোঁসাইগঞ্জবাসীরা
আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। দুই গ্রামের মধ্যে চিরকালের রেষারেষি। তাই
নন্দীপুর স্কুল প্রতিষ্ঠা করে ফেলায় গোঁসাইগঞ্জ হেরে
যাবে, নন্দীপুরের কাছে ছোটো হয়ে যাবে সেটা গ্রাম্বাসীরা মেনে নিতে পারেনি। এজন্য
তাদের গ্রামে স্কুল খোলার জন্য অন্যান্যরা গ্রামের মাতব্ব হীরু দত্তের উপর
চাপ সৃষ্টি করে। নিজের গ্রাম সম্বন্ধে হীরু দত্তের
মনে অহংকার আসে। গ্রামকে নন্দীপুরের কাছে
কোন প্রকারে ছোট হতে দিবে না। তিনি
গ্রামবাসীদের আশা দিয়ে বলেন যে, তার দেহে প্রাণ
থাকতে কিছুতেই তিনি গোঁসাইগঞ্জকে নন্দীপুরের কাছে
ছোট হতে দেবেন না। তারা যে স্কুল খুলেছে তার থেকে চতুর্গুণ
ভালো স্কুল তিনি খুলবেন। তাদের থেকে বেশি
মাইনে দিয়ে কলকাতা থেকে তিনি মাস্টার নিয়ে আসবেন। সেই
মাস্টার এত ভাল হবে যে, ওদের গ্রামের মাস্টারকে পর্যন্ত সে
পড়াতে পারবে। এই কথাগুলি বলে তিনি তিন সত্যি করেন। স্কুল
বসাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রামের মানুষের সমস্ত আশঙ্কা দূর করেন।
খ) “একেবারে
সন্ইকোয়েল – পুত্রতুল্য। তাঁর
ছেলেরা আজও আমায় বোজে দাদা বলতে ইগনোরেন্ট
--- অজ্ঞান”।
উত্তরঃ আলোচ্য
অংশটি কথাশিল্পী প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘মাস্টারমহাশয়’ গল্প
থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ব্রজ
মাস্টারের ইংরেজি জ্ঞানের কিঞ্চিৎ পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
কে সত্যি সত্যিই ‘সেকেন্ড
বুক’ পড়ার পরও স্কুলে পড়া চালিয়েছিল, সেটার
সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য হারান মাস্টার যখন গোঁসাইগঞ্জের দুইজন
মানুষকে তাদের পড়ার সময়ের মাস্টার মহাশয়ের নিকট
যাওয়ার প্রস্তাব করে তখন মাস্টার তা শুনে আলোচ্য প্রসঙ্গের অবতারণা করে।
স্কুল ছেড়ে দেবার ব্যাপারে দুই মাস্টার যখন একে অপরের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তখন গ্রামবাসীরা নিজ নিজ মাস্টারমশাই
পক্ষ অবলম্বন করে। হারান যখন ব্রজ মাস্টারের নামে অভিযোগ
আনে, ব্রজ মাস্টার তখন অনেক গুণ বাড়িয়ে হারান মাস্টারের
অসারতা প্রমাণ করে। এভাবে যখন কে সত্য কথা বলছে তা প্রমাণ
হয় না, তখন হারান মাস্টার প্রস্তাব দেয় যে, তারা
যে মাস্টারের কাছে পড়েছে, সেই মাস্টার এখনো জীবিত আছেন; গোঁসাইগঞ্জের দুইজন
মানুষ তার সঙ্গে মাস্টার মহাশয়ের কাছে গেলেই
আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।
হারান মাস্টারের এই প্রস্তাব শুনে ব্রজ
মাস্টার এক বাক্যেই সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। সে
গ্রামবাসীদের বোঝায় সে হারান মাস্টারের এসব কথা একেবারেই মিথ্যা। কারণ
তাদের মাস্টারমহাশয় গত বছরই মারা গিয়েছেন। তার
শ্রাদ্ধের সে নিমন্ত্রণ খেয়ে এসেছে। তার
কথাটির সঠিক যে, গ্রামবাসীদের মনে বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য
সে বলে যে, মাস্টারমহাশয় তাকে খুবই ভালবাসতেন।
মাস্টার মহাশয়ের কাছে সে পুত্রতুল্য ছিল। সেকথা
বোঝাবার জন্য বলে ‘একেবারে সন্ইকোয়েল’। এভাবে
শব্দের অপপ্রয়োগ হাসির উদ্রেক করলেও সে জানে গ্রামবাসীরা সে ভুল ধরতে পারবেনা। সে আরো
জানায় যে মাস্টার মহাশয়ের পুত্ররা আজও
তাকে সম্মান করে, বোজে দাদা
বলে। তারা তার প্রতি ‘ইগনোরেন্ট বা অজ্ঞান’। অর্থ
বলে দিয়ে মিথ্যাকে এভাবে সে প্রতিষ্ঠা দেয়।
No comments