সন্ধি ও স্বরসন্ধি
সন্ধি
সন্ধি
মূলত একটি প্রক্রিয়া। বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে ধ্বনির সংকোচন ঘটায়। ভাষায় ধ্বনির
শ্রুতিমাধুর্য তৈরি করে ভাষাকে সমৃদ্ধি করে। ধ্বনি সংকোচনে
বাগ্যন্ত্রের পরিশ্রম লাঘব হয়।
১. হিমালয়
– হিম + আলয় হ + ই + ম + অ + আ + ল
+ য় অ + আ
২. দিগন্ত
– দিক্ + অন্ত দ + ই + ক + অ + ন + ত + অ ক + অ
৩. অতএব
– অতঃ + এব অ + ত + ঃ + এ + ব + অ
ঃ + এ
৪. আশ্চর্য
– আ + চর্য আ + চ + র + য + অ বর্ণের আগমন
উপরের
উদাহরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, শুধু বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনেই সন্ধি হয়না। যেমন ১ নং
উদাহরণে শুধু বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে সন্ধি হয়েছে। ২ নং উদাহরণে বর্ণ কিছুটা বিকৃত
হয়ে পরিবর্তন হয়েছে। ৩ নং উদাহরণে দুটি বর্ণের মাঝে একটি নতুন বর্ণের লোপ ঘটেছে। ৪
নং উদাহরণে দুটি বর্ণের মাঝে একটি নতুন বর্ণের আগমন ঘটেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, শুধু বর্ণের
সঙ্গে বর্ণের মিলনেই সন্ধি হয়না। বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে কিছুটা বিকৃত হয়ে কিংবা
একটি বর্ণের প্রভাবে ওপর বর্ণটির লোপ বা আগমনের মাধ্যমে সন্ধি হতে পারে। এইজন্য সংস্কৃত
সন্ধির তুলনায় বাংলা সন্ধিতে বর্ণ সংকোচন ও শ্রুতিমাধুর্যতাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে।
বাংলা
ভাষা সংস্কৃতি ভাষা থেকে সরাসরি উৎপত্তি না হলেও বাংলা ভাষায়
সংস্কৃত ভাষার যথেষ্ট প্রাধান্য রয়েছে। অনেক শব্দই সংস্কৃত
থেকে সরাসরি এসে বাংলায় স্থায়ীত্ব লাভ করে। সেদিক থেকে সংস্কৃত
বা তৎসম শব্দগুলিতে সংস্কৃতের সন্ধির নিয়ম প্রযোজ্য। অপরদিকে বাংলার নিজস্ব
শব্দে সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম প্রকৃতি বিরুদ্ধ মনে হয়।
একনজরে –
সন্ধি
তৎসম (সংস্কৃত) শব্দ।
সন্ধি
শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সম-ধা + ই প্রত্যয়।
সম্
মানে একসঙ্গে। ধা মানে ধারণ করা। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে একসঙ্গে ধারণ করাকে সন্ধি বলে।
সন্ধি
একসঙ্গে সন্নিহিত দুটি বর্ণ ধারণ করে।
এককথায়,
সন্নিহিত দুটি বর্ণের একসঙ্গে ধারণ বা মিলনকে সন্ধি বলে।
পানিনি
অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে সন্ধিকে সংহিতা নাম দিয়েছে। সংহিতা মানেও সম্মিলন বা ঐক্য।
তবে মনে
রাখতে হবে, সংস্কৃত সন্ধির থেকে বাংলা সন্ধিতে নিয়মের ব্যতিক্রম
রয়েছে। সংস্কৃত সন্ধিতে একটি বর্ণের সঙ্গে অপর বর্ণের মিলন
ঘটলেও বাংলায় কখনো কখনো মিলন না হয়ে বর্ণদুটি প্রভাবিত হয়। একটি অপরটির প্রভাবে একটি
লুপ্ত হয়। কিংবা কিছুটা পরিবর্তন হয়।
এইজন্য
সন্ধিজাত শব্দগুলি বাংলা চলিত ভাষায় বিশিষ্ট সম্পদ।
বাংলা ব্যকরণে সন্ধির
গুরুত্বঃ
সন্ধি
ধ্বনি সংকোচন করে।
দ্রুত
উচ্চারণে সাহয্য করে।
ভাষাকে
শ্রুতিমধুর করে, ভাষার মাধুর্যকে বাড়িয়ে তোলে।
সংস্কৃত ভাষায় সন্ধির খুবই প্রাধান্য। সেখানে নিয়মের মধ্য দিয়েই
সন্ধি হয়ে থাকে। বাংলায় কোমলতা ও শ্রুতিমাধুর্যকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। সন্ধির
কঠোর নিয়ম নীতি অপেক্ষা ভাষার মাধুর্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা সংস্কৃত
নিয়মে পাশাপাশি দুটি পদেরও সন্ধি হতে পারে। কিন্তু বাংলায় তা সম্ভব নয়।
সেদিক থেকে বিচার করে সন্ধিকে দু ভাগে ভাগ করা যায়।
সন্ধির প্রকারভেদঃ
তবে সার্বিকভাবে
বিচার করলে সন্ধিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি এবং বিসর্গসন্ধি।
আবার অনেকে নিপাতনে সন্ধির কথাও বলেছেন। সেগুলি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১। স্বরসন্ধি
১। ক) আ – কেন্দ্রিক
সন্ধি
হিমাদ্রি – হিম + অদ্রি অ
+ ই
বিবেকানন্দ – বিবেক + আনন্দ অ + আ
যথার্থ
– যথা + অর্থ আ + অ
সুধাকর
– সুধা + আকর আ + আ
আমরা
প্রত্যেকটা উদাহরণে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে একটা পূর্ণ শব্দ তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটা
শব্দে অ, আ কিংবা অ আ উভয়ে মিলে যুক্ত হয়ে আ তৈরি হয়েছে। এটি সন্ধির অন্যতম প্রক্রিয়া।
তবে,
শব্দটিকে বিচ্ছেদ করার জন্য আমরা শব্দের বিভাজিত অংশকে চিহ্নিত করে সন্ধি বিচ্ছেদের
প্রক্রিয়াটিকে সমাপ্ত করতে পারি। যেমন – হিমালয়’ শব্দের যেখানে বিচ্ছেদের ঝোক পড়েছে
সেখানে ‘আ’ স্বরধ্বনিটি আছে অতএব সেখানে বুঝতে হবে বিভাজিত শব্দটির আগে ও পরের স্বরধ্বনিটি
অ বা আ কিংবা উভয়েই হতে পারে।
সুতরাং বলা যায়,
শব্দের বিভাজিত অংশে আ থাকলে পূর্বের ও পরের বর্ণ দুটি অ বা আ কিংবা উভয়েই হতে পারে।
অন্যভাবে, অ বা আ
কিংবা উভয়বর্ণের মিলনে আ হয়।
অতিরিক্ত
বেদান্ত,
রামায়ণ, পরায়ণ,
অপরাহ্ণ, স্বদেশানুরাগ, দিবসান্তে, রক্তাক্ত,
পারাবার, রোমাঞ্চিত, গৌরাঙ্গিনী, পরাবার, হিমাদ্রি,
পরান্ন, চরাচর, সর্বস্বান্ত, কৃতার্থ, কুর্মাচল, উত্তরাধিকার,
চিরাভ্যস্ত, চরণামৃত, জীবানু, সিতাসীত, স্বাধীনতা, রক্ষনাবেক্ষণ, পুষ্পাঞ্জলী, স্নেহান্ধ,
শুভানুধ্যায়ী, দেবানুগৃহীত, নবানুরাগ, সূর্যাস্ত, চিরাচরিত,
পরমানন্দ, রত্নাকর, পদানত, প্রেমাবেশ, চরণাশ্রিত, চিত্তাকর্ষক,
গতায়াত, ধ্যানাসীন, দেবাহুতি, দূরাগত, যজ্ঞাগার, হিতাকাঙ্ক্ষী, স্নেহাশীষ, পূজার্চনা,
যথার্থ, মহিমান্বিত, তন্দ্রাভিভূত, বিদ্যার্জন, শ্রদ্ধাঞ্জলি, কারারুদ্ধ,
কথামৃত, আশাতিরিক্ত, শিক্ষানুরাগ, মায়াঞ্জন, বিদ্যাভ্যাস,চিন্তান্বিত,
সুধার্ণব, স্পর্ধান্বিত,ঈর্ষান্বিত, মুক্তাধিক, দ্বারকাধীশ,
চূড়ান্ত।
পরীক্ষাগার,
বিদ্যালয়, মহাহব,
কল্পনালোক, সূত্রাকার,
সুধাকার, ক্ষুধাতুর, পূজাহ্নিক, নিদ্রাছন্ন, শিক্ষায়তন, আশাহত, ছায়াবৃতা,
মহাশয়, মহালয়, মাত্রাধিক্য।
১। খ) ঈ কেন্দ্রিক
অতীত
– অতি + ইত ই + ই
পরীক্ষা
– পরি + ঈক্ষা ই + ঈ
সুধিন্দ্র
– সুধী + ইন্দ্র ঈ + ই
শচীশ
– শচী + ঈশ ঈ + ঈ
প্রত্যেকটি উদাহরণে
ঈ কারের অংশে বিভাজিত হচ্ছে। অতএব ই ঈ বা ই ঈ বর্ণের মিলনে ঈ বর্ণে পরিণত হয়েছে।
সূত্রে বলতে পারি
ঈ কার অংশে বিভাজিত হলে পুর্বে ও পরের বররণগুলি ই ঈ বা ই ঈ উভয়েই হতে পারে।
অন্যভাবে, ই ঈ বা
ই ঈ বা ঈ ই বা ঈ ঈ বর্ণের মিলনে ঈ হয়।
অতিরিক্ত উদাহরণ
রবীন্দ্র, মুনীন্দ্র,
অতীব, অতীত, পরীক্ষা, সুধীন্দ্র,
শচীশ, প্রতীতি, অতীন্দ্রিয়, গিরীশ, পরীক্ষিত, পরীক্ষণ, প্রতীক্ষা,
অদ্রীশ, অভিপ্সা, সতীশ।
১। গ) ঊ কেন্দ্রিক
কটুক্তি
– কটু + উক্তি উ + উ
লঘুর্মি
= লঘু + ঊর্মি উ + ঊ
বধূৎসব
= বধূ + উৎসব ঊ + উ
সরযূর্মি
= সরযূ + ঊর্মি ঊ + ঊ
প্রত্যেকটি উদাহরণে ঊ কারের অংশে বিভাজিত হচ্ছে।
অতএব উ ঊ কিংবা ঊ ঊ বর্ণের মিলনে ঊ বর্ণে পরিণত হয়েছে।
সূত্রে বলতে পারি,
ঊ কার অংশে বিভাজিত হলে পুর্বে ও পরের বর্ণগুলি উ ঊ বা ঊ ঊ উভয়েই হতে পারে।
অন্যভাবে, উ উ বা
উ ঊ বা ঊ উ বা ঊ ঊ বর্ণের মিলনে ঊ হয়।
অতিরিক্ত
কটুক্তি, মরুদ্দ্যান, সুক্ত,
ভানূদয়, মৃত্যুত্তীর্ণ।
১। ঘ) এ কেন্দ্রিক
শুভেচ্ছা
= শুভ + ইচ্ছা অ + ই
অপেক্ষা
= অপ + ঈক্ষা অ + ঈ
মহেন্দ্র
= মহা + ইন্দ্র আ + ই
রমেশ
= রমা + ঈশ আ + ঈ
প্রত্যেকটি উদাহরণে
দেখেছি, এ বা এ কারের বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ই/ঈ এর
মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ এ কারে বিভাজিত
হলে পূর্বের স্বরবর্ণ অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ই/ঈ হবে।
অন্যভাবে, অ/আ এর
সঙ্গে ই/ঈ যুক্ত হয়ে এ কার তৈরি করে।
অতিরিক্ত
স্বেচ্ছা,
পূর্ণেন্দু, বলেন্দ্র,
দেবেন্দ্র, সূর্যেন্দু,
দর্শনেন্দ্রিয়, জ্ঞানেন্দ্রিয়,
রাজেশ্বর, ভবেশ,
অপেক্ষা, ঋষিকেশ,
গোপেশ্বর, হৃদয়েশ্বর,
যথেষ্ট, মহেন্দ্র,
মহেশ্বর, মিথিলেশ,
মহেশ্বর।
১। ঙ) ও কেন্দ্রিক
স্নাতকোত্তর
= স্নাতক + উত্তর অ + উ
চলোর্মি
+ চল + ঊর্মি অ + ঊ
কথোপকথন
= কথা + উপকথন আ + উ
মহোর্মি
= মহা + ঊর্মি আ + ঊ
প্রত্যেকটি উদাহরণে
দেখেছি, ও বা ও কারের বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে উ/ঊ এর
মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ ও কারে বিভাজিত
হলে পূর্বের স্বরবর্ণ অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে উ/ঊ হবে।
অন্যভাবে, অ/আ এর
সঙ্গে উ/ঊ যুক্ত হয়ে ও কার তৈরি করে।
অতিরিক্ত
কাব্যোদ্দান,
দামোদর, লম্বোদর,
রসোত্তীর্ণ, সময়োপযোগী, পূণ্যোদক, সূর্যোদয়,
পাদোদক, প্রথমোক্ত,
পুরুষোত্তম, সর্বোচ্চ,
জলোচ্ছ্বাস, গাত্রোত্থান,
স্নানোৎসব, পুষ্পোদ্যান,
স্নাতকোত্তর, সর্বোত্তম,
পরোপকারী, অস্ত্রোপ্রচার,
কথোপকথন, যথোচিত,
দুর্গোৎসব, স্বাধীনতা,
নবোঢ়া।
১। চ) অর/রেফ্ কেন্দ্রিক
দেবর্ষি
= দেব + ঋষি অ + ঋ
মহর্ষি
= মহা + ঋষি আ + ঋ
প্রত্যেকটি উদাহরণে
দেখেছি, অর বা রেফ্ এর বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ঋ এর
মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ অর/রেফ্
এর বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণ অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ঋ হবে।
অন্যভাবে, অ/আ এর
সঙ্গে ঋ যুক্ত হয়ে অর/রেফ্ তৈরি করে।
অতিরিক্ত
দেবর্ষি, বিপ্রর্ষি,
রাজর্ষি, স্নেহার্ত,
বেদনার্ত, পিপাসার্ত,
ক্ষুধার্ত।
১। জ) ঐ কেন্দ্রিক
হিতৈষী
= হিত + এষী অ + এ
মতৈক্য
= মত + ঐক্য অ + ঐ
তথৈব
= তথা + এব আ + এ
মহৈক্য
= মহা + ঐক্য আ + ঐ
প্রত্যেকটি উদাহরণে
দেখেছি, ঐ বা ঐ কারের বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে এ/ঐ এর
মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ ঐ কারের বিভাজিত
অংশে পূর্বের স্বরবর্ণ অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে এ/ঐ হবে।
অন্যভাবে, অ/আ এর
সঙ্গে এ/ঐ যুক্ত হয়ে ঐ কার তৈরি করে।
অতিরিক্ত
জনৈক,
সর্বৈব, হিতৈষী, শুভৈষী,
মতৈক্য, সদৈব, তথৈব, বসুধৈব,
মহৈরাবত।
বনৌষধ, অমৃতৌষধ,
মহৌষধি, মহৌদার্য, মহৌৎসুক্য।
১। ঝ) ঔ কেন্দ্রিক
বনৌষধি
= বন + ওষধি অ + ও
পরমৌষধি
= পরম + ঔষধি অ + ঔ
মহৌষধি
= মহা + ওষধ আ + ও
মহৌদার্য
= মহা + ঔদার্য আ + ঔ
প্রত্যেকটি উদাহরণে দেখেছি, ঔ বা ঔ কারের বিভাজিত
অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ও/ঔ এর মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ ঔ কারের বিভাজিত
অংশে পূর্বের স্বরবর্ণ অ/আ এবং পরের স্বরবর্ণে ও/ঔ হবে।
অন্যভাবে, অ/আ এর
সঙ্গে ও/ঔ যুক্ত হয়ে ঔ কার তৈরি করে।
১। ঞ) য – ফলা কেন্দ্রিক
অত্যন্ত
= অতি + অন্ত ই + অ
অভ্যাগত
= অভি + আগত ই + আ
প্রত্যুষ
= প্রতি + ঊষ ই + ঊ
নদ্যম্বু
= নদী + অম্বু ঈ + অ
উপরিউক্ত উদাহরণে
দেখেছি, য ফলায় বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে ই/ঈ এবং পরের স্বরবর্ণে ই/ঈ বাদে অ/আ/উ/ঊ
এর মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ য ফলায় বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণ ই/ঈ এবং পরের
স্বরবর্ণে ই/ঈ বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হবে।
অন্যভাবে, ই/ঈ এর
সঙ্গে ই/ঈ বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ যুক্ত হয়ে য ফলা তৈরি করে।
অতিরিক্ত
প্রত্যাগমন,
ইত্যাদি, অধ্যায়ন,
অনুমত্যানুসারে, প্রত্যাশিত,
ইত্যবসরে, অধ্যুষিত,
প্রত্যাবর্তন, অভ্যাগত,
পর্যটন, অত্যাশ্চর্য,
ব্যুৎপত্তি, প্রত্যাখ্যান,
প্রত্যুপকার, অত্যন্ত,
অধ্যায়ন, পর্যন্ত,
উপর্যুপরি, পর্যাপ্ত,
পর্যবসিত পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা
১। ট) ব – ফলা কেন্দ্রিক
স্বল্প
= সু + অল্প উ + অ
স্বাগত
= সু + আগত উ + আ
অন্বিত
= অনু + ইত উ + ই
অন্বেষণ
= অনু + এষণ উ + এ
বধ্বাগম
= বধূ + আগম ঊ + আ
উপরিউক্ত
উদাহরণে দেখেছি, ‘ব’ ফলায় বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণে উ/ঊ এবং পরের স্বরবর্ণে উ/ঊ
বাদে অ/আ/উ/ঊ এর মিলন ঘটেছে।
সূত্রঃ ‘ব’ ফলায় বিভাজিত অংশে পূর্বের স্বরবর্ণ উ/ঊ এবং
পরের স্বরবর্ণে উ/ঊ বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হবে।
অন্যভাবে, উ/ঊ এর
সঙ্গে উ/ঊ বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ যুক্ত হয়ে ‘ব’ ফলা তৈরি করে।
১। ঠ) অয় – কেন্দ্রিক
নয়ন
– নে + অন এ + অ
শয়ান
– শে + আন এ + আ
শয়িত
– শে + ইত এ + ই
যেখানে অয় উচ্চারিত হয় তার অব্যবহিত পূর্বের বর্ণের
সঙ্গে এ কার যুক্ত হবে। পরবর্তী বর্ণটি এ বা এ কার বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হতে পারে।
অন্যভাবে, এ স্বরবর্ণের
সঙ্গে এ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের মিলনে অয় উচ্চারণ হয়।
১। ড) আয় কেন্দ্রিক
গায়ক
– গৈ + অক ঐ + অ
নায়িকা
– নৈ + ইকা ঐ + ই
যেখানে আয় উচ্চারিত
হয় তার অব্যবহিত পূর্বের বর্ণের সঙ্গে ঐ কার যুক্ত হবে। পরবর্তী বর্ণটি ঐ বা ঐ কার
বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হতে পারে।
অন্যভাবে, ঐ স্বরবর্ণের
সঙ্গে ঐ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের মিলনে আয় উচ্চারণ হয়।
১। ঢ) অব কেন্দ্রিক
ভবন
– ভো + অন ও + অ
গবাদি
– গো + আদি ও + আ
পবিত্র
– পো + ইত্র ও + ই
গবেষণা
– গো + এষণা ও + এ
যেখানে অব উচ্চারিত
হয় তার অব্যবহিত পূর্বের বর্ণের সঙ্গে ও কার যুক্ত হবে। পরবর্তী বর্ণটি ও বা ও কার
বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হতে পারে।
অন্যভাবে, ও স্বরবর্ণের
সঙ্গে ও ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের মিলনে অব উচ্চারণ হয়।
১। ন) আব কেন্দ্রিক
দ্রাবক
– দ্রৌ + অক ঔ + অক
নাবিক
– নৌ + ইক ঔ + ই
ভাবুক
– ভৌ + উক ঔ + উ
যেখানে আব উচ্চারিত
হয় তার অব্যবহিত পূর্বের বর্ণের সঙ্গে ঔ কার যুক্ত হবে। পরবর্তী বর্ণটি ঔ বা ঔ কার
বাদে যেকোনো স্বরবর্ণ হতে পারে।
অন্যভাবে, ঔ স্বরবর্ণের
সঙ্গে ঔ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণের মিলনে আব উচ্চারণ হয়।
১। ত) নিপাতনে সন্ধি
–
নিপাতনে একটি তৎসম শব্দ।
নি- পত্ ধাতু ই + অন প্রত্যয়ে গঠিত। এর অর্থ
নিয়মের ব্যতিক্রম।
এককথায়, সন্ধির নিয়ম না মেনে মুখে মুখে প্রচলিত
যে সন্ধি তাকে নিপাতনে সন্ধি বলে।
যেমন – অ + অ -
সূত্র |
সন্ধির রূপ |
অশুদ্ধ রূপ |
শুদ্ধ রূপ |
অ + অ = আ |
কুল + অটা |
কুলাটা |
কুলটা |
অ + আ = আ |
সম + অর্থ |
সমার্থ |
সমার্থ |
অ + ঊ = ও |
প্র + ঊঢ় |
প্রোঢ় |
প্রৌঢ় |
অ + ও = ঔ |
শুদ্ধ + ওদন |
শুদ্ধৌদন |
শুদ্ধোদন |
অ + ঈ = এ |
স্ব + ঈর |
স্বের |
স্বৈর |
ও + অ = অব |
গো + অক্ষ |
গবক্ষ |
গবাক্ষ |
অ + এ = ঐ |
প্র + এষণা |
প্রৈষণা |
প্রেষণা |
***********************************************************
No comments