লিঙ্গ ও তার শ্রেণীবিভাগ
লিঙ্গ
লিঙ্গ একটি সংস্কৃত শব্দ।
ব্যুৎপত্তি হলো লিঙ্গ+অ
লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন, লক্ষণ,
নিদর্শন।
ব্যাকরণে শব্দ শ্রেণি
বিশেষ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
লিঙ্গ শব্দের বিশেষণ লৈঙ্গ, লৈঙ্গিক।
যে কোন লক্ষণের সাহায্যে
বিশেষ্য শব্দের জাতি বা শ্রেণি নির্দেশিত হয় তাকে লিঙ্গ বলে।
অন্যভাবে যে সকল শব্দের দ্বারা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের
মধ্যে পুরুষ, স্ত্রী বা ভিন্ন জাতি বোঝায় তাকে লিঙ্গ বলে।
শ্রেণীবিভাগ
লিঙ্গ চার প্রকার। যথাঃ
ক) পুং লিঙ্গ - পুরুষ জাতিকে বোঝায়। যেমন
– পিতা, পুত্র, বাঘ, সিংহ
ইত্যাদি।
খ) স্ত্রীলিঙ্গ -
স্ত্রীজাতিকে বোঝায়। যেমন – মাতা, মেয়ে,
শিক্ষিকা ইত্যাদি।
গ) উভয় লিঙ্গ – পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কে
বোঝায়। যেমন – শিশু, বন্ধু, শত্রু, চালাক, বোকা, সন্তান,
ইত্যাদি।
ঘ) ক্লীবলিঙ্গ – স্ত্রী
পুরুষ কোন শ্রেণিকেই বোঝায় না। যেমন – মোবাইল, বই,
ফুল, কলম ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় শব্দের প্রকৃতি অর্থাৎ
তা স্ত্রী-পুরুষ বা অপ্রাণিবাচক
কোনটি তার উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।
সংস্কৃত ভাষায় লিঙ্গ নির্ধারিত হয় শব্দের গঠন প্রকৃতির
উপর ভিত্তি করে।
সংস্কৃতে লিঙ্গ
নির্ধারণে প্রত্যয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলায় প্রত্যয় অনুসারে অর্থাৎ
সংস্কৃত নিয়মে লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
লিঙ্গ শব্দের অর্থ হলো ব্যাকরণিক চিহ্ন বা বিধি।
যা দ্বারা একটি লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।
ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘জগতে বা
প্রকৃতিতে বস্তুসমূহ পুরুষ স্ত্রী ও নপুংসক বা ক্লীব - এই তিন জাতি বা
শ্রেণিতে পড়ে। বহু
স্থলে ভাষাতেও প্রাকৃতিক অবস্থা অনুসারে নামবাচক শব্দগুলিকে এই শ্রেণিতে ফেলা
হয়। পুরুষ জাতীয় বস্তুর নামকে পুং
লিঙ্গ, স্ত্রী জাতীয় বস্তুর নামকে স্ত্রী লিঙ্গ ক্লীব বা নপুংসক
জাতীয় বস্তুর নামকে ক্লীব লিঙ্গ বলা হয়’।
বাংলা ব্যাকরণে লিঙ্গ আলোচনায় তৎসম শব্দের প্রভাব বেশি
থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম বাংলা ভাষার লিঙ্গ প্রকরণে প্রযোজ্য
হয় না। যেমন তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পুরুষবাচক
বিশেষণ এবং স্ত্রী বাচক বিশেষ্য শব্দের স্ত্রীবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত হয়।
‘বিদ্বান পুরুষ’ এবং ‘বিদুষী
নারী’ এখানে পুরুষ পুরুষবাচক বিশেষ্য এবং নারী
স্ত্রীবাচক বিশেষ্য। পাশাপাশি ‘বিদ্বান’
পুরুষবাচক বিশেষণ এবং বিদূষী স্ত্রীবাচক
বিশেষণ।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম প্রযোজ্য
হয় না। যেমন - সংস্কৃতে ‘সুন্দর
বালক’ ও ‘সুন্দরী
বালিকা’ ব্যবহৃত হলেও বাংলায় বিশেষণের পরিবর্তন হয়
না। বাংলায় ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে – সুন্দর বালক
এবং সুন্দর বালিকা।
সর্বনামের
লিঙ্গভেদ –
বিশেষ্যের পরিবর্তে সর্বনাম হয়।
বিশেষ্যের যে লিঙ্গ সর্বনামেরও সে লিঙ্গ।
পুং লিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গে
সর্বনামের কোন লিঙ্গভেদ নেই।
স্ত্রী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই একই সর্বনাম ব্যবহৃত
হয়।
সর্বনাম লিঙ্গভেদ দুই প্রকার -
উভ লিঙ্গ – আমি, আমরা, তুমি, তোমরা ইত্যাদি। এগুলো
প্রাণিবাচক হয়।
ক্লীব লিঙ্গ – এটা, ওটা, সেটা,
যা, তা ইত্যাদি। এগুলো অপ্রাণিবাচক হয়।
লিঙ্গ
পরিবর্তনের নিয়ম
পুংলিঙ্গ বাচক শব্দের শেষে প্রত্যয় যোগ করে।
স্ত্রীবাচক পদ আগে বা পরে
বসিয়ে।
ভিন্ন শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে।
No comments