মহাকাশ ও মহাবিশ্ব
মহাবিশ্ব
দিনের বেলায় সূর্য আর রাতের আকাশে চাঁদ সহ অসংখ্য আলোকবিন্দু
হলো জ্যোতিষ্ক।
কোটি কোটি জ্যোতিষ্ক অর্থাৎ গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, গ্রহাণুপুঞ্জ,
ধূলিকণা, গ্যাস প্রভৃতি নিয়ে অসীম শূন্যস্থানকে (Space) মহাবিশ্ব (Universe) বলে।
আধুনিক মত অনুযায়ী মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ একটা বালির কণার
থেকেও ছোটো অবস্থায় ছিল।
প্রায় ১৪০০কোটি বছর আগে তার প্রসারণ শুরু হয়।
প্রচুর তাপ আর অকল্পনীয় শক্তির সঙ্গে প্রচুর ধূলিকণা ও গ্যাসের
মহাজাগতিক মেঘ সৃষ্টি হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এই ধুলোর মেঘ, গ্যাস থেকে তৈরি হয় অসংখ্য
নীহারিকা, ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতি।
মহাবিশ্বের সবকিছুই চলমান অবস্থায় আছে এবং ক্রমাগত একে অপরের
থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
সূর্য, চাঁদ, তারা, ছায়াপথ, ধূমকেতু, উল্কা পর্যবেক্ষণ করার
বিজ্ঞানকে ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান’ বলে।
নীহারিকা
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় যে অসংখ্য ধূলিকণা ও গ্যাসের মহাজাগতিক
মেঘ তৈরি হয় তা হলো নীহারিকা (Nebula)।
এই নীহারিকা থেকেই তারা বা নক্ষত্রের জন্ম হয়।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রায় দশ লক্ষ বছর পরে গ্যাসীয় পদার্থগুলো
জমাট বাঁধতে শুরু করে।
আর তাদের মধ্যে মধ্যে তৈরি হতে থাকে শূন্যস্থান।
জমাট বাঁধা পদার্থগুলো প্রচণ্ড গতিতে একে অপরের সঙ্গে মিলে গিয়ে
প্রকাণ্ড আকারের জ্বলন্ত নক্ষত্রের জন্ম দেয়।
ছায়াপথ
লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র নিয়ে এক একটা ছায়াপথ (Galaxy) তৈরি
হয়।
সূর্য, পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ এরকমই আকাশগঙ্গা (Milky way) নামে
পরিচিত একটা ছায়াপথে রয়েছে।
ছায়াপথগুলো প্যাঁচানো, ডিম্বাকার ইত্যাদি নানা রকম আকৃতির হয়।
প্রায় ১০ হাজার কোটি নক্ষত্র, গ্যাস, ধূলিকণা নিয়ে আকাশগঙ্গা
একটা বিরাট প্যাঁচানো ছায়াপথ।
খালি চোখে রাতের আকাশে যত তারা দেখা যায় সবই আকাশগঙ্গা ছায়াপথের
তারা।
নক্ষত্র
তারা বা নক্ষত্র (Star) একটা জ্বলন্ত
গ্যাসীয় পিণ্ড যাদের নিজস্ব আলো ও উত্তাপ আছে।
কোন তারা কতটা উত্তপ্ত, তার রং দেখে বোঝা যায়।
ছোটো লাল তারার উষ্ণতা সব থেকে কম।
আকাশে এরকম তারার সংখ্যা সব থেকে বেশি।
মাঝারি হলুদ তারার উষ্ণতা আর একটু বেশি।
বিরাট নীল তারার উষ্ণতা প্রচণ্ড বেশি, এবং বেশ উজ্জ্বল।
প্রকাণ্ড সাদা তারার উষ্ণতা এবং উজ্জ্বলতা দুটোই সবথেকে
বেশি।
খালি চোখে তারাগুলোকে দেখা যায়।
তারারা কোটি কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
নক্ষত্রমণ্ডল
কাছাকাছি থাকা তারাগুলোর কাল্পনিক আকৃতিকে
‘নক্ষত্রমণ্ডল’ (Constellation) বলে।
‘সপ্তর্ষিমণ্ডল’ - উত্তর আকাশে সাতটি উজ্জ্বল তারা।
‘ক্যাসিওপিয়া' - ইংরাজি ‘M’ অক্ষরের মতো।
‘বকমণ্ডল’ - ক্রুশচিহ্নের মতো ।
‘কালপুরুষ’ – একে কল্পনা করা হয়েছে পুরাকাহিনির
এক সাহসী শিকারি রূপে।
‘ধ্রুবতারা’ - উত্তর আকাশের উজ্জ্বল
তারা।
বহুকাল ধরে ‘ধ্রুবতারা’ দেখেই রাত্রিবেলা নাবিকরা, অভিযাত্রীরা
‘উত্তর’ দিক ঠিক করত।
টেলিস্কোপ - আকাশ দেখার জন্য কাচ লাগানো বিশাল চোং
(দূরবিন বা
টেলিস্কোপ)।
প্রতিটা টেলিস্কোপের জন্য তৈরি করতে হয় বিরাট গোলাকার গম্বুজ,
এই বিরাট গোলাকার গম্বুজগুলিকে ‘মানমন্দির’ (Observatory) বলে।
শক্তিশালী টেলিস্কোপ-এর মাধ্যমে দুশো কোটি আলোকবর্ষ দূরের তারাও
দেখা যায়।
No comments