বোধ পরীক্ষণ (আপার/প্রাইমারি টেট )
বোধ পরীক্ষণ
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় Comprehension বা বোধ পরীক্ষণ শব্দ দুটির অর্থ প্রায় একই। এর আক্ষরিক অর্থ জ্ঞান
যাচাই করা বা অর্থবোধ। এককথায় কোনো বিষয়কে সামগ্রিকভাবে বোঝার বা উপলব্ধির ক্ষমতা।
অনযভাবে বলা যায়, কোনো একটি রচনাংশ পড়ে তার বিষয়গত এবং ভাষাগত বিভিন্ন দিক নিজের
কাছে কতটা স্পষ্ট, তার মূল্যায়ন করার পদ্ধতি হল
বোধ পরীক্ষণ বা Comprehension
Test ।
এখানে শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত
অনুচ্ছেদটিকে পড়ে হৃদয়ঙ্গম করতে পারছে কিনা এবং নিজের ভাব ঠিকমতো প্রকাশ করতে
পারছে কিনা তা যাচাই করা হয়। এইজন্য নির্বাচিত অংশটির বিষয়গত কিংবা ভাষাগত
জটিলতা, অপরিচিত শব্দ, উপমা প্রভৃতিকে যথার্থভাবে বুঝতে হয়।
বোধ পরীক্ষণ
সমাধানের সঠিক উপায় :
১। অনুচ্ছেদটি পাঠের পূর্বে
প্রদত্ত প্রশ্নগুলি অতি দ্রুততার সহিত দেখে নেওয়া উচিত।
কারণ প্রশ্নগুলি আগে পড়ে নিলে পাঠটি পড়ার সময় উত্তরগুলি
খুবই সহজে নির্ণয় করতে সুবিধা হয়।
২। অনুচ্ছেদটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
৪। অনুচ্ছেদটির ভেতরে থাকা বিষয়গত কিংবা
ভাষাগত জটিলতা, অপরিচিত শব্দ, উপমা এবং তাৎপর্যকে যথার্থভাবে বুঝতে হবে।
৫। অনুচ্ছেদটি পাঠের সময় প্রাপ্ত
উত্তরগুলিকে চিহ্নিত করতে পারলে প্রশ্নগুলি সমাধান করা সহজ সাধ্য হবে।
৬। অনুচ্ছেদের বাইরে কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না।
৭। অপরিচিত বিষয় বা তাৎপর্য কেন্দ্রিক প্রশ্ন থাকলে ভাব ভাষাকে বিষয়ের সঙ্গে
মিলিয়ে অনুমানের সাহায্যে উত্তর দিতে হবে।
কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল
নির্দেশঃ নিম্নলিখিত গদ্য/পদ্যটি পাঠ করে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর নির্বাচন করুন।
১
বন্ধুবর
ইন্দ্রনাথের গুণ অনেক। সে ভারত বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ। মিষ্ট ভাষণে তার জুড়ি
নেই। অনুভূতির সূক্ষ্মতায় তাকে শিল্পী বলা চলে। বুদ্ধির তীক্ষ্ণতায় সে ইন্ডিয়ান
শার্লক হোম।
কিন্তু
চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। ইন্দ্রনাথেরও একটা বদ্ দোষ আছে। তা হল তার অহংভাব। পাঁচজনের
সামনেই এমন টিটকিরি মেরে বসে যা শুনে কান-টান ঝাঁ-আঁ করে ওঠে।
সেদিন এই
নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড হয়ে গেল আমাদের মধ্যে।
রবিবারের
বিকেলে ইন্দ্রনাথের মেসে গেছিলাম আমি আর গৃহিণী কবিতা। গিয়ে দেখি লঙ্কা পায়রার
মতো এক ফুলবাবু জোড়হস্তে দাঁড়িয়ে। ইন্দ্রনাথের ললাটে কুটি। এবং যেন কিছু
বিব্রত।
আমাদের
দেখেই বললে–এসো ভায়া এসো। বসো বউদি। তোমাদের কথাই হচ্ছিল।
কালো চোখ
নাচিয়ে লাল ঠোঁট বেঁকিয়ে কবিতা বললে–কী সৌভাগ্য আমাদের।
কিন্তু
উপলক্ষ্যটা কী? জিগ্যেস
করলাম আমি।
এই
ভদ্রলোকের নাম লম্বোদর লস্কর। আর ইনিই সেই কুখ্যাত সাহিত্যিক মৃগাঙ্ক রায়।
জীবনসঙ্গিনী কবিতা রায়। যাঁদের কথা আপনাকে বলছিলাম লম্বোদরবাবু।
নমস্কার-প্ৰতিনমস্কারের
পালা শেষ হলে বিনয়-গলিত হেসে লক্কাপায়রা যুবকটি বললেন– এজ্ঞে, আমি
এসেছিলাম ইন্দ্রনাথবাবুর কাছে অ্যাপ্রেন্টিস হতে।
কীসের
অ্যাপ্রেন্টিস?
গোয়েন্দাগিরির।
হাসি চেপে
বললাম–, ইন্দ্রনাথ
বলে কী?
এজ্ঞে, উনি বলেন
আপনাদের দ্বারাও যখন অ্যাদ্দিনে কিছু হয়নি, তখন আমার দ্বারাও হবে না।
কী!
ফস করে
দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে ইন্দ্রনাথ বললে–কথাটা কি মিথ্যে বলেছি, মৃগ? এতদিন ধরে
আমার সাগরেদি করে শুধু ছাইভস্ম লেখা ছাড়া আর কিছু করতে পেরেছ আজ পর্যন্ত? বৌদির কথা
বাদই দিলাম, মেয়েদের
দ্বারা জগতে কোনও মহকর্ম সাধিত হয় না।
মুখ লাল করে
কবিতা বললে–ঠাকুরপো তোমার বড় দেমাক হয়েছে।
রেগে গিয়ে
আমি বললাম–সুযোগ এলে তোমার দর্প আমি চূর্ণ করব।
অট্টহেসে
ইন্দ্রনাথ বললে–সুযোগ এসেছে।
কীরকম?
জয়ন্ত ফোন
করেছিল। রাঁদেভু হোটেলে একজন খুন হয়েছে। বেরুতে যাচ্ছি এমন সময়ে এলেন
লম্বোদরবাবু। তারপরেই তোমরা।
তাই নাকি? তাই নাকি? জ্বলজ্বলে
চোখে বললে লম্বোদর।
চ্যালেঞ্জটা
অ্যাকসেপ্ট করবে কিনা ভেবে দেখ, বলল ইন্দ্রনাথ। মুরোদ থাকে চলো আমার সঙ্গে। বউদি তুমিও এসো।
লম্বোদরবাবু, যাবেন
নাকি? গোয়েন্দা
হওয়ার যোগ্য কার আছে আর কার নেই–তা জয়ন্তর সামনেই একটা টেস্ট কেসেই প্রমাণিত
হয়ে যাক।
গল্প-টল্প
লিখে ইদানীং আমারও একটু দম্ভ হয়েছিল বোধহয়, তা না হলে লম্বোদয় লস্করের সামনে
ইন্দ্রনাথের টিপ্পনীতে অত অপমানিত বোধ করব কেন।
তক্ষুনি
লাফিয়ে উঠে বললাম–চলো দেখা যাক কেরামতিটা কার বেশি।
পাঞ্জাবির
দিকে হাত বাড়িয়ে ইন্দ্ৰনাথ শুধু বললে–চলো।
পরে অবশ্য
অনুতপ্ত হয়েছিলাম এই হঠকারিতার জন্যে।
নির্দেশঃ গদ্যটি পাঠ করে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর
নির্বাচন করুন।
১। ইনি কুখ্যাত সাহিত্যিক?
ক) লম্বোদর লস্কর খ)
ইন্দ্রনাথ
গ) মৃগাঙ্কর রায়, ঘ) জয়ন্ত রায়
২। ‘ইন্দ্রনাথেরও একটা বদ্ দোষ আছে।‘ বদ দোষ কী?
ক) আত্মগরিমা খ) পরোপকারী
গ) টিটকিরি ঘ) ব্যঙ্গ বিদ্রুপ
৩। ইন্দ্রনাথের মেসে গিয়েছিলেন –
ক) লেখক খ) লেখক ও কবিতা
গ) জয়ন্ত, ইন্দ্রনাথ ঘ) লম্বোদর ও মৃগাঙ্ক
৪। গদ্যাংশে কাকে ইন্ডিয়ান শার্লক হোম বলা হয়েছে?
ক) মৃগাঙ্ক রায় খ) লম্বোদর লস্কর
গ) জয়ন্ত রায় ঘ) ইন্দ্রনাথ বাবু
৫। লেখকের অনুশোচনার কারণ কী?
ক) সংঘাত খ) সৌজন্য
গ) কুখ্যাতি ঘ)
হঠকারিতা
৬। নিচের প্রদত্ত মন্তব্য ও তার সমর্থনে যুক্তির মধ্যে শুদ্ধ-অশুদ্ধ বিচারের
নিরিখে বিকল্প থেকে সঠিক উত্তরটি বির্বাচন করুন।
মন্তব্য: ব্যঞ্জনধ্বনি ছাড়াই শুধুমাত্র স্বরধ্বনি অক্ষর হিসেবে বিবেচিত
হতে পারে কিন্তু স্বরধ্বনি ছাড়া কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি
অক্ষর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
যুক্তি: প্রতিটি অক্ষরে অন্তত একটি করে স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে।
ক) মন্তব্য ও যুক্তি উভয়েই সঠিক খ) মন্তব্য সঠিক
গ) যুক্তি সঠিক ঘ) কোনোটিই সঠিক নয়।
৭। মুখ লাল করে কবিতা বললে–ঠাকুরপো তোমার বড় দেমাক হয়েছে। - উদ্ধৃত বাক্যটিতে বিশেষ্য পদ আছে
ক) ১টি খ) ২টি গ) ৩টি ঘ)
৪টি
৮। ‘অ’ স্বরধ্বনির বিকৃত উচ্চারণ হয়
না, যদি –
ক) শব্দের আদিতে র ফলা থাকে
খ) একাক্ষর শব্দের আদযব্যঞ্জনে ‘অ’ থাকে [উত্তর]
গ) শব্দের আদিতে ‘অ’ ের পরে ‘ই’ থাকে
ঘ) শব্দের আদিতে
‘অ’ এর পর ‘উ’ থাকে
৯। জোড়কলম শব্দের উদাহরণ
ক) হাসপাতাল
খ) আনারস
গ) মিনতি ঘ) নিধুবন
No comments