কৃপণঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই কবিতাটি রূপকের
আড়ালে লেখা। কবিতাটিতে কবির জীবন দর্শ্ ন প্রকাশিত। এক ভিখারি গ্রামের পথে ভিক্ষা করতে
বেরিয়েছে। পথে এক রাজাধীরাজকে দেখে সে উৎফুল্ল হয়। সে মনে মনে ভাবতে থাকে আজ তাঁর সকল
দুঃখ দূর হবে। রাজাধীরাজ পথে ধনধান্য ছড়িয়ে যাবে আর সে মুঠো মুঠো কুড়িয়ে নেবে। সেই
ধনে সে সমস্ত দূঃখ দূর করবে। তাকে আর বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতে হবে না। সে সেই আনন্দে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। হঠাৎ রাজাধীরাজ স্বর্ণ রথ থেকে তাঁর দিকে নেমে আসে আর প্রসন্ন মুখে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে "আমায় কিছু দাও গো" বলে উঠে। ভিখারি চমকে উঠে। সে ভাবতে থাকে রাজাধীরাজের তো অভাব থাকার নয়, তাঁর তো অনেক কিছু আছে। এই ভাবে বিষন্ন হয়ে ভাবতে ভাবতে সে তাঁর ঝুলি থেকে একটি ছোট্ট শস্য কনা তাকে দান করে । কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে ঝুলি উজার করে দেখতে পায় একটি মাত্র কণাই সোনায় পরিণত হয়েছে। স্বর্ণ কণা দেখে ভিখারির মনে হয়েছে রাজাধীরাজ স্বয়ং ঈশ্বর ছিল। তাকে যদি উজার করে দিতে পারত তাহলে আজ সব কিছুই সোনায় পরিনত হত। তাই সে দিনান্তে ভিখারি আক্ষেপ করেছে।
কবি এই কবিতার মধ্যে দিয়ে নিজের ঈশ্বর চিন্তাকে প্রকাশ করে
ভিডিও পেতে ক্লিক করুনঃ https://youtu.be/GgU1Muc9XY0
এই কবিতাটির বিস্তারিত পেতে নিচে স্ক্রোল কর-
কৃপণ কবিতার সারসংক্ষেপঃ
কৃপণ কবিতাটি খেয়া কাব্যগ্রন্থের
অন্তর্গত। কবি রূপকের আড়ালে মানব জীবনের গভীর সত্যকে তুলে
ধরেছেন। এখানে এক ভিখারির সঙ্গে রাজাধীরাজের সাক্ষাতে ভক্ত ভগবানের সম্পর্ক তুলে ধরেন।
এক ভিখারি গ্রামের পথে পথে ভিক্ষা
করে ফিরছিল। সেই পথে রাজাধিরাজকে দেখতে
পেয়ে খুশি হয়। ভিখারি ভাবতে থাকে, রাজাধিরাজ পথে অনেক মণি-মুক্তা ছড়িয়ে যাবে আর সে
ভবিষ্যৎ জীবনের শান্তি পাওয়ার আশায় সেগুলো কুড়িয়ে নেবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেই রাজাধিরাজ স্বর্ণ রথ থেকে
নেমে এসে ভিখারির মত প্রসন্ন মুখে হাত বাড়িয়ে
বলেছে “আমায় কিছু দাও গো”। ভিখারি অবাক হয়ে যায়, সে ভাবতে থাকে রাজাধীরাজের তো কোনো অভাব নেই।
সে আমার কাছে কি চাইতে পারে। সে কোনমতে ঝুলি থেকে একটি শস্যকণা তাকে
তুলে দিয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে বাড়িতে এসে ঝুলি উজাড় করে
দেখতে পেয়েছে একটি ছোট্ট সোনার কণা। অর্থাৎ যতটুকু সে দান
করেছে সেটুকুই তার কাছে সোনা হয়ে ফিরে এসেছে। তখন সে আক্ষেপ করেছে। ভেবেছে সে কেন সবটা উজার করে দিতে পারেনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভিখারীর সঙ্গে রাজাধীরাজের সাক্ষাতে জাগতিক মানুষের কৃপণতা কে
তুলে ধরেছেন। রাজাধীরাজ বা রাজভিখারী এখানে স্বয়ং ঈশ্বর।
রাজাধীরাজ ভিখারীর সামনে হাত পেতেছেন। আসলে
মানুষ চিরকাল ঈশ্বরের কাছে চেয়ে এসেছে। ঈশ্বরকে দেওয়ার
কথা ভাবেনি। তবে ঈশ্বর ভক্তের কাছে কিছুই নেন না। ভক্ত তাকে যা
দান করে তাই তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাই কবির ঈশ্বর
এখানে নিজেই ভিখারি সেজে মানুষের কাছে এসেছে। কবির ভাবনা অনুসারে নিজেকে উজাড় করে দিতে না পারলে ঈশ্বরেরে
কাছে কিছুই পাওয়া যায় না। আবার পাওয়ার প্রত্যাশায় যে দান
কবি তাকে কখনোই সমর্থন করেননি। এইভাবে
কবিতাটিতে ভিখারির আড়ালে জাগতিক মানুষের কৃপণতার চরম সত্যকে ব্যক্ত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঈশ্বর চেতনাঃ
খেয়া কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কৃপণ
কবিতাটিতে কবি রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর চেতনার একটি রূপরেখা ধরা
পড়েছে। কবিতাটিতে ঈশ্বর রাজাধিরাজ বা
রাজভিখারী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তাকে
দেখে ভিখারি আনন্দিত বোধ করেছে। ভেবেছে
স্বর্ণরথে আসা রাজাধিরাজ ধনধান্য ছড়িয়ে যাবে আর সেগুলো মুঠো মুঠো কুড়িয়ে নেবে
এবং পরবর্তী জীবনকে সুখে ভরিয়ে তুলবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভিখারীর রাজাধীরাজের সাক্ষাতে জাগতিক মানুষের কৃপণতাকে তুলে
ধরেছেন। রাজাধীরাজ বা রাজভিখারী এখানে
স্বয়ং ঈশ্বর। রাজাধীরাজ ভিখারীর সামনে হাত পেতেছেন। আসলে মানুষ চিরকাল ঈশ্বরের কাছে চেয়ে এসেছে।
ঈশ্বরকে দেওয়ার কথা ভাবেনি। তবে ঈশ্বর ভক্তের কাছে কিছুই নেন
না। ভক্ত তাকে যা দান করে তাই তাকে ফিরিয়ে দেয়। তাই কবির ঈশ্বর এখানে নিজেই ভিখারি সেজে মানুষের কাছে এসেছে।
কবির ভাবনা অনুসারে নিজেকে উজাড় করে দিতে না পারলে ঈশ্বরেরে কাছে কিছুই পাওয়া যায় না। আবার পাওয়ার
প্রত্যাশায় যে দান কবি তাকে কখনোই সমর্থন করেননি। এইভাবে কবিতাটিতে ভিখারির আড়ালে জাগতিক মানুষের কৃপণতার
চরম সত্যকে ব্যক্ত করেছেন।
১. অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।
ক. কৃপণ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের
অন্তর্গত?
উত্তরঃ কৃপণ কবিতাটি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “খেয়া” কাব্যগ্রন্থের
অন্তর্গত।
খ. কবিতার “আমি” গ্রামের পথে কি উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন?
উত্তরঃ কবিতার “আমি” গ্রামের পথে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।
গ. রথ থেকে নেমে রাজাধিরাজ ভিখারিকে কি বলেছিলেন?
উত্তরঃ রথ থেকে নেমে
রাজাধিরাজ ভিখারিকে হাত বাড়িয়ে বলেছিলেন “আমায় কিছু দাও”।
ঘ. ভিখারি রাজাধিরাজকে কী দিয়েছিলেন?
উত্তরঃ ভিখারি রাজাধিরাজকে একটি
ক্ষুদ্র শস্য কণা দিয়েছিলেন।
ঙ. দিনান্তে ঘরে ফিরে ভিখারি তাঁর
ভিক্ষান্নের মধ্যে কী দেখেছিলেন?
উত্তরঃ দিনান্তে ঘরে ফিরে ভিখারি তাঁর
ভিক্ষান্নের মধ্যে একটি ছোট্ট স্বর্ণকণা দেখতে
পেয়েছিলে।
২. সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ক. রাজাধিরাজ রথ থেকে পথের দু’ধারে
কী ছড়িয়ে দেবেন এবং তা নিয়ে ভিখারি
কি করবেন বলে ভেবেছিলেন?
উত্তরঃ স্বর্ণ রথে আসা রাজাধিরাজ রথ থেকে পথের দু’ধারে ধনধান্য ছড়িয়ে দেবেন এবং
ভিখারি ভেবেছিলেন তা মুঠো মুঠো কুড়িয়ে নেবেন।আর তাকে দ্বারে ভিক্ষা করতে হবেনা।
খ. রথ থামার পর রাজাধিরাজ কী
করেছিলেন?
উত্তরঃ রথ থামার পর রাজাধিরাজ
ভিখারীর মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে মধুর হেসে রথ থেকে নিচে
নেমে এলেন এবং ভিখারিকে অবাক করে দিয়ে নিজের হাত পেতে ‘আমায়
কিছু দাও গো’ বলে ভিক্ষা চাইলেন।
গ. রাজাধিরাজের কথা শুনে ভিখারির কী মনে হয়েছিল?
উত্তরঃ রাজাধিরাজের
কথা শুনে ভিখারির কিছুক্ষন মাথা নিচু করে ছিল। সে ভেবছে
তাঁর কোনো অভাব থাকতে পারে না। রাজাধিরাজ কৌতুকের বসে তাকে প্রবঞ্চনা করছে। এই ভেবে
ভিখারি তাকে একটি শস্যকণা দান করে।
ঘ. ভিক্ষান্নের মধ্যে সোনার কণা দেখে ভিখারি কেন আক্ষেপ
করেছিল? উত্তরঃ দিনের শেষে ভিক্ষান্নের
মধ্যে একটি সোনার কোনা দেখে ভিখারির আক্ষেপ হ্যেছিল কারণ, রাজাধিরাজ আসলে মানুষ নন তিনি পর্মেশ্বর। সেই পরমেশ্বর যখন
তার কাছে কিছু চাইলেন তখন তাঁর কৃপণতা না করে সমস্ত কিছু
উজার করে দেওয়া উচিত ছিল। সে তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত
চোখে আক্ষেপ করেছিল।
ঙ. রাজভিখারি বলতে কাকে চিহ্নিত
করা হয়েছে?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর রাজাধিরাজকে রাজভিখারি বলেছেন। কারন তাঁর অভাব না
থাকা সত্বেও ভিখারির কাছে হাত পেতেছেন। তবে রাজভিখারি এখানে ঈশ্বরেরে প্রতিরূপ।
৩. বড় প্রশ্নোত্তরঃ
ক. কৃপণ কবিতার কাহিনী অংশ নিজের
ভাষায় বর্ণনা দাও
উত্তরঃ কবিতার সারসংক্ষেপ
লেখ।
খ. “কৃপণ”
কবিতা কৃপণ কে- ভিখারি না রাজভিখারি?
তোমার মন্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ কৃপণ কবিতায় কবি দুইজন ভিখারির কথা বলেছেন। ভিখারি আর রাজভিখারি। তবে
ভিখারিই প্রকৃত কৃপণ।
কবিতায় বর্ণিত একজন সাধারন ভিখারী
অন্যজন রাজভিখারী। রাজভিখারী রথ থেকে নেমে
ভিখারির কাছে ভিক্ষা চায়। ভিখারি তাকে একটি
মাত্র শস্যকণা দান করে। সেই সূত্র অনুসারে ভিখারি হলো প্রকৃত
কৃপণ। রাজভিখারীর কোন অভাব না থাকা সত্ত্বেও ভিখারির কাছে ভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু ভিখারি প্রকৃত সত্য
বুঝতে না পেরে নিজের ঝুলি থেকে একটি মাত্র শস্যকণা বের করে
দিয়েছিল। যে শস্য দানা তার নিজের নয় তা সত্ত্বেও অন্যকে
দান করতে সে কুণ্ঠাবোধ করেছে। সে দিক থেকে ভিখারির কৃপণতাই
প্রকৃত হয়ে ধরা পরেছে।
গ. কোন যুক্তিতে ভিখারি রাজাকে
ক্ষুদ্র কণা ভিক্ষা দিয়েছিলেন এবং পরিশেষে কেনই বা তার জন্য
আক্ষেপ করেছিলেন- বিস্তৃত করো
উত্তরঃ গ্রামের পথে পথে ভিক্ষা করা এক
ভিখারি স্বর্ণরথে রাজাধিরাজকে দেখতে পেয়ে মুগ্ধ হয়। ভিখারি
ভেবেছিল রাজা পথের ধারে ধনধান্য ছড়িয়ে দেবে, সে মুঠো মুঠো
কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু রাজভিখারি রথ থেকে নেমে তার কাছে হাত পেতে বলেছে “আমায় কিছু দাও
গো”। সে ভেবেছে তার কোনো অভাব নেই, সে ধনদৌলতে পরিপূর্ণ। তাই নিয়ম
রক্ষার্থে সামান্য কিছু দান করলেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে বুঝতে
পারলেন সেই শস্যকণাই সোনা হয়ে ফিরে এসেছে। অর্থাৎ
যতটুকু সে দান করেছে সেটুকুই তার কাছে সোনা হয়ে ফিরে এসেছে। তখনই সে আক্ষেপ করেছে। ভেবেছে সে কেন সবটা উজার করে দিতে পারেনি।
ঘ. কৃপণ কবিতায় বর্ণিত কাহিনি
অনুসারে কবির চরিত্রে চিত্রণ দক্ষতার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ কৃপণ কবিতায় কবি দুইজন ভিখারির কথা বলেছেন।
একজন সাধারন ভিখারী অন্যজন রাজভিখারী। কবি জাগতিক
মানুষের স্বভাব বৈশিষ্ট্যে ভিখারীর চরিত্র চিত্রণ করেছেন। ভিখারী এখানে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব
করেছে। সাধারণ মানুষের মতো ভিখারির স্বার্থের শেষ নেই। স্বার্থলোভী ভিখারি ভিক্ষালব্ধ শস্য কণাকে দান করতে পারেনি। নিজের মন থেকে স্বার্থ চিন্তাকে বিসর্জন দিতে পারেনি। অন্যের কাছ থেকে পাওয়া শস্য কণাও সে দান করতে পারেনি। ভিখারির
চরিত্রে স্বার্থপরতার পরিচয় পাওয়া গেছে।
রাজ ভিখারীর চরিত্রে কবি বিলাস বৈভবে পূর্ণ প্রকৃত মানুষের পরিচয় দেন। রাজাধিরাজ এখানে পরমেশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজভিখারী রথ থেকে
নেমে ভিখারির কাছে ভিক্ষা চায়। ভিখারি তাকে
একটি মাত্র শস্যকণা দান করে। সেই সূত্র
অনুসারে ভিখারি হলো প্রকৃত কৃপণ। রাজভিখারীর কোন অভাব না থাকা সত্ত্বেও ভিখারির কাছে ভিক্ষা
চেয়েছিল কিন্তু ভিখারি প্রকৃত সত্য বুঝতে না পেরে নিজের ঝুলি থেকে একটি মাত্র শস্যকণা
বের করে দিয়েছিল। যে শস্য দানা তার নিজের নয়
তা সত্ত্বেও অন্যকে দান করতে সে কুণ্ঠাবোধ করেছে।
ঙ. কৃপণ কবিতা অবলম্বনে
রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বর চেতনার স্বরূপ
বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
ঈশ্বর চেতনা অংশটি লেখ।
No comments