Header Ads

বঙ্গভাষা মাইকেল মধুসূদন দত্ত দীর্ঘ প্রশ্ন উত্তর

 বঙ্গভাষা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

৩। দীর্ঘ প্রশ্ন উত্তর

ক) কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে কিভাবে অর্থাৎ কি কি সাহিত্যকীর্তি দ্বারা আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন?

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক তিনি সাহিত্যে মধুকবি নামে পরিচিত তিনি প্রথম জীবনে পাশ্চাত্য সাহিত্য ও জীবনধারার অনুরাগী ছিলেন। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত, মাতা জাহ্নবী দেবী। গ্রামে পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন সেখানেই ডিরোজিওকে কেন্দ্র করে ইয়ং বেঙ্গল দলের দ্বারা প্রভাবিত হন এবং ইংরেজী ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন তিনি মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবজ্ঞা করে ইংরেজি ভাষার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। বায়রন, মিল্টনের মতো প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছিলেন। তাই ১৮৪৩ সালে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মাইকেল উপাধি লাভ করেন এরপর গ্রীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত, জার্মান, ইতালি প্রভৃতি ভাষা দক্ষতা অর্জন করেন ১৮৬২ সালে তিনি বিলেত যান এবং বিলেত যাওয়ার আগেই শর্মিষ্ঠা,(১৮৫৯) একেই কি বলে সভ্যতা’(১৮৬০) বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ,(১৮৬০) পদ্মাবতী,(১৮৬০) কৃষ্ণকুমারী,(১৮৬১) তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য,(১৮৬০) মেঘনাবধ কাব্য,(১৮৬১) ব্রজাঙ্গনা কাব্য,(১৮৬১) বীরাঙ্গনা কাব্য(১৮৬২) ইত্যাদি কাব্য নাটক রচনা করেন। ফ্রান্সে থাকাকালীন তিনি চতুর্দশপদী কবিতাবলী রচনা করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সূচনা করেন।

হাজার বছরের বাংলা কাব্যের প্রথাগত ধারা কবিতার প্রথম বন্ধনমুক্তি ঘটে মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাতে। কবিতা চরণের শেষে অন্ত্যমিলের প্রথা ভেঙে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন এছাড়াও সার্থক নাটক, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, পুরাণের নবায়ন প্রভৃতি সাহিত্য সৃষ্টি করে আধুনিকতার প্রবর্তন করেছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার অগ্রদূত হিসেবে বাংলা ভাষায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিষয় ভাবনায়, জীবন দর্শনে মধুসূদনের রচনা আধুনিকতার পরিচয় দিয়েছে।। অবশেষে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে জুন তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন

 


খ) বঙ্গভাষা' কবিতায় কবির আত্ম অনুশোচনার কারণ কি?

বাংলা সাহিত্যে মধুসূদন দত্ত মধুকবি নামে পরিচিতবাংলার ইতিহাসে এক যুগ সন্ধিক্ষণে মধুসূদনের জন্ম। উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় শিক্ষাসভ্যতা ধর্ম-দর্শন এদেশে আমূল পরিবর্তনে আনে। মধুসূদন দত্ত সংস্কারমুক্তির চিন্তায় ডিরোজিওর ইয়ং বেঙ্গল দলের সদস্য হন ইউরোপীয় শিক্ষাসভ্যতা সাহিত্য-সংস্কৃতি দর্শনের অনুপ্রাণিত হয়ে পাশ্চাত্য সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছেন বাংলা সাহিত্য ছেড়ে ইংরেজি সাহিত্যে মিল্টন বায়রণের মত কবি হতে চেয়েছিলেন কিন্তু মাতৃভাষা ছেড়ে অন্য কোন ভাষায় সহজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব নয় তা তিনি প্রথম অবস্থায় বুঝতে পারেননি মাতৃভাষার রূপ-সৌন্দর্য বুঝতে পেরে শেষে মাতৃভাষাতেই চর্চা শুরু করেছেন

মাতৃভাষাকে ছেড়ে বিদেশে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লোভে পরবাসী হয়েছিলেন এই কাজকে কবি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন ফলে পরদেশে তাকে অনিদ্রায় অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে ফলে সুখ ত্যাগ করে পদ্মবন ছেড়ে শৈবালে কেলি করেছেন। যার ফল ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। অবশেষে স্বপ্নে কুললক্ষ্মীর আদেশে দেশে ফিরে এসেছেন মাতৃভাষা চর্চা করে বাংলা ভাষার সম্পদ ও রূপ সৌন্দর্যকে উপলদ্ধি করেছেন। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও ঐশর্য দেখে কবি অনুতপ্ত হয়েছেন। এইভাবে বঙ্গভাষা' কবিতায় কবি মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ ব্যক্ত করেছেন এবং আত্মসমালোচনা করে ভুল শুধরে নিতে চেয়েছিলেন




No comments

Powered by Blogger.