Header Ads

বঙ্গভাষা মাইকেল মধুসূদন দত্ত সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা

 বঙ্গভাষা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

৩। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা

ক) “ওরে বাছা মাতৃকোষে রতনের রাজি,

 এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?”

 এখানে ওরে বাছা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তার ভিখারির দশার কারণ কি?

উত্তরঃ এখানে ওরে বাছা বলতে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিজেকেই বুঝিয়েছেন

ইউরোপীয় সাহিত্য দর্শনকে ভালোবেসে কবি প্রথম জীবনে মিল্টন বায়রনের মত কবি হতে চেয়েছিলেন তিনি ইংরেজি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এর জন্য খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন মাদ্রাজে শিক্ষকতা ও সংবাদপত্রের কাজও করেন এরপর তিনি বিদেশীনিকে বিবাহ করে বিদেশে থাকা শুরু করেন। এ সময় তিনি চরম আর্থিক সঙ্কটে পরেন। ঈশ্বরচন্দ্র অর্থ সাহায্য করে দেনার দায় থেকে মুক্ত করেন এবং দেশে ফেরার ব্যাবস্থা করেন। বিদেশে অভাব-অনটনে দিন যাপন করে যথাযথ প্রতিষ্ঠা পাননি। কিন্তু মাতৃ ভাষাতে সাহিত্য সৃষ্টির যথেষ্ঠ উপকরণ ছিল। সেই সম্পদকে অভেলা করে কবি পাশ্চাত্যের সাহিত্যে মনোনিবেশ করেছিলেন অনাহারে অনিদ্রায় পরের ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে একপ্রকার ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেছেন। তাই কবি নিজে নিজের ভিখারী-দশা জন্য অনুশোচনা করেছেন

খ) “মজিনু বিফল তবে অবরেণ্য বরিঃ

 কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন”।

কবি বাংলাভাষাকে পদ্মের সঙ্গে এবং ইংরেজি ভাষাকে শ্যাওলার সঙ্গে তুলনা করেছেন কবি বলতে চেয়েছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে উপেক্ষা করে বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করে তিনি ভুল করেছেন। পদ্মের মতো রূপ-সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ বাংলা ভাষাকে ছেড়ে শ্যাওলার মতো বিদেশি ভাষা চর্চায় তার সাধনা ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশি ভাষা সাহিত্য তার কাছে অবরেণ্য ছিল বা গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিন্তু সেই গ্রহণযোগ্যহীন সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লোভে মজে গিয়েছিলেন। তাই কবির কাছে মনে হয়েছে, এ যেন পদ্মবনকে উপেক্ষা করে শ্যাওলা নিয়ে খেলা করা

গ) “মাতৃ-ভাষা-রূপে খুনি পূর্ণ মণিজালে”।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি মধুসূদন দত্তের বঙ্গভাষা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে কবি মাতৃভাষা বাংলার রূপ সৌন্দর্য সাহিত্য রচনা সঠিক উপকরণে পরিপূর্ণতা সম্পর্কে উক্তিটি ব্যবহার করেছেন

কবি প্রথম জীবনে ইংরেজি সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়েছিলেন মাতৃভাষা ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন কিন্তু কুললক্ষ্মীর আদেশে বাংলা ভাষার রুপ সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে পারেন বাংলা ভাষাতেও সাহিত্য রচনা সমস্ত উপকরণ আছে, সেই উপকরণ এর সাহায্যে কেউ সাহিত্য চর্চা করলে সহজেই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে, তা পলব্ধি করতে পেরেছেন

এককথায় মাতৃভাষা ও সাহিত্যের ভাণ্ডার যেন খনির মতো রত্ন সম্পদের আকর। খনি থেকে যেমন রত্নরাজি লাভ করা যায় তেমনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অজস্র ঐশ্বর্য ও সম্ভাবনায় ভরপুর। যেমন, কবিকঙ্কনের ‘চণ্ডীমঙ্গল’, ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’ কালিদাসের ‘মেঘদূত’ ও জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’কে অমুল্য সম্পদ বলা হয়।

ঘ) “যা ফিরি অজ্ঞান তুই” - কে কাকে উক্ত আদেশ করেছিলেন? কাকে অজ্ঞান বলা হয়েছে? তাকে কোথায় ফিরে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ মধুসূদন দত্ত রচিত বঙ্গভাষা' কবিতায় কুললক্ষ্মী কবি মধুসুদন দত্তকে উক্ত আদেশ দিয়েছিলেন

 এখানে কবি মধুসূদন দত্তকে অজ্ঞানবলা হয়েছে।

কুললক্ষ্মী মধুসূদনকে বাংলা সাহিত্যে ফিরে আসার কথা বলেছেন নিজ দেশে ফিরে এসে মাতৃভাষা চর্চা করার আদেশ দিয়েছেন




No comments

Powered by Blogger.