Header Ads

Header ADS

গণেশ জননী - বনফুল

 গণেশ জননী - বনফুল

৩। বড়ো প্রশ্ন  (প্রতিটি প্রশ্নের মূল্যাঙ্ক ৪/৫)

) গণেশ জননী গল্পের লেখক কে চাকরি জীবনে কী কী করতে হতো?

 উত্তরঃগণেশ জননী গল্পের লেখক পেশায় পশু চিকিৎসক তিনি সরকারি পশু চিকিৎসা বিভাগে চাকরি করেন চাকরি জীবনে কমিশনার সাহেবের ঘোড়া, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কুকুর, পুলিশ সাহেবের গাভী প্রভৃতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এছাড়াও ছ্যাকড়া গাড়ির ‘পাস’ করে অন্ন সংস্থান করেন। আর এই দরিদ্র দেশে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা না থাকলেও তিনি মাঝে মাঝে লে’ গিয়ে পশু চিকিৎসা করেন

) গণেশ জননী গল্পের লেখককে স্টেশন থেকে নিয়ে যাবার জন্য যে ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিলেন- তার চেহারা এবং পোশাক পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও

উত্তরঃগণেশ জননী গল্পের লেখক হাতি চিকিৎসার জন্য একটি ছোট স্টেশনে উপস্থিত হন সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গণেশের প্রতিপালক ভদ্রলোকটি এসেছিলেন লেখক প্রতিপালক ভদ্রলোকটিকে ভেবেছিলেন জমিদারের কোন কর্মচারী ব্যাক্তিটির চেহারায় জমিদারের গোমস্তার মতো দেখতেপায়ে ক্যাম্বিসের জুতা এবং পরনে মলিন জামা কাপড় ছিল। আর পাঁচ-সাত দিনের না কামানো, এক মুখ খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা গোঁফ দাড়িতে তাকে অদ্ভুত লাগছিল

গ) “গণেশ জননী গল্পের ভদ্রলোক হাতি কিভাবে পেয়েছিলেন ?

 উত্তরঃগণেশ জননী গল্পের লেখক পেশায় চিকিৎসক একদিন কলে হাতি অসুস্থ হওয়ার খবর পান হাতির চিকিৎসা করতে গিয়ে এক মফস্বল গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে উপস্থিত হন। মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতি পোষা সম্ভব নয় ভেবে ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করেন। সেই সূত্রেই ভদ্রলোক জানায়, সে অনেক দিনের কথা ভদ্রলোকের অনেক ক্ষেত খামার আছে। নিজের ক্ষেত খামারেই কাজ করেন। দশ বছর আগে একদিন মাঠ থেকে ফিরতে হঠাৎ একজনকে দেখতে পান সে অজ্ঞান অবস্থায় মুখ গুঁজে পড়ে আছে লোকজন ডেকে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। বাড়ি এনে সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। ব্যক্তিটি সুস্থ হওয়ার পরে জানা যায়, সে কচ্ছির ব্যবসাদার ঘোড়া যাওয়ার সময়, ঘোড়া তাকে ফেলে পালিয়ে গেছে পরে ঘোড়াটিকে পাওয়া যায় এবং লোকটি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পরে এক ভদ্রলোক একটি ছোট হাতির বাচ্চা নিয়ে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয় তার হাতের চিঠি থেকে জানা যায় কচ্ছিসেই ব্যবসাদার তার প্রাণদানের উপহারস্বরূপ একটি ছোট্ট হাতি পাঠিয়েছে চিঠিতে জানিয়েছেন-

আপনারা আমাদের প্রাণ দান করেছেন, আপনাদের কি আর দিতে পারি, সামান্য উপহার পাঠালাম গ্রহণ করলে কৃতার্থ হব”।

সেদিন হাতিটির দুষ্টু দুষ্টু চোখ, ছোট শুড় দেখে ভদ্রলোকের গিন্নি গনেশের নাম দিয়ে রেখে দিয়েছে এরপর নিঃসন্তান ভদ্রলোক এবং ভদ্রলোকের গিন্নি সন্তান শ্নেহে গণেশকে লালন পালন করেছে

 

 

ঘ) “আরে মশাই আমাদের ঘর কি আর মানুষের ঘর আছে, হাতির ঘর হয়ে গেছে”- এই উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

উত্তরঃ বনফুলের গণেশ জননী গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে গণেশের প্রতিপালক চিকিৎসককে এ কথা বলেছিল হাতিটি বড় হয়ে পোষ মেনেছেরের দরজাগুলি বড় বড় করে কেটে দিয়ে তার চলাফেরা জন্য ব্যবস্থা করার প্রসঙ্গেই আলোচ্য উদ্ধৃতিটি করা হয়েছে

আসলে কচ্ছি ব্যবসাদারের কাছে পাওয়া ছোট হাতি তখন বড় হয়েছে গণেশকে সন্তান শ্নেহে লালন পালন করে পোষ মানিয়েছে পোষ মানার কথা বলতে গিয়ে ভদ্রলোক বলেন যে যখন তাঁর স্ত্রী স্নানে যায় তখন গণেশ গামছা বালতি নিয়ে পিছু পিছু যায়। আর গিন্নি যখন রান্নাঘরে রাঁধেন তখন শুড়ে পাখা নিয়ে হাওয়া করে এক কথায় হাতির প্রতি মায়া মমতায় বাড়ির সর্বস্ব হাতির হয়ে গেছে। তার বৃহৎ শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভদ্রলোক ঘরের দরজা বড় বড় করে কেটে দিয়েছেন। আসলে আলোচ্য অংশটির মাধ্যমে হাতি ও ভদ্রলোক দম্পতির গভীর আন্তরিক সম্পর্ক কে ইঙ্গিত করেছে

ঙ) “গণেশ জননী গল্পে গণেশ জননী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে এবং কেন ?

 উত্তরঃ বনফুলের গণেশ জননী গল্পে গণেশ জননী বলতে গণেশের প্রতিপালক ভদ্রলোকটির স্ত্রীকে কথা বোঝানো হয়েছে

গণেশ জননী গল্পটি একটি হাতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। কচ্ছির এক ব্যবসাদার প্রাণ বাঁচানোর জন্য হাতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ভদ্রলোককে উপহার দিয়েয়েছিলেন প্রতিপালকের স্ত্রী হাতি ছোট্ট দুষ্টু দুষ্টু চোখ, শুড় দেখে আনন্দিত হয় এবং নিঃসন্তান গিন্নি আনন্দে বলে ওঠে- ও আমার গণে এসেছে। বলেই তার সামনে এক বাটি দুধ এগিয়ে দিলেন ”। অর্থাৎ নিঃসন্তান গিন্নি ছোট্ট দুষ্টু দুষ্টু চোখ, শুড় দেখে তাকে ভালবেসে ফেলেছেন। তাকে সন্তানের মত লালন পালন করেছেন। পুজোর সময় রুপোর ঘন্টা বানিয়ে দিয়েছেন। গণেশও সন্তানের মতোই গিন্নির স্নানের সময় গামছা বালতি দোলাতে দোলাতে নিয়ে গিয়েছে কিংবা রান্নাঘরে গরমের সময় পাখা দিয়ে হাওয়া করেছে তেমনি গণেশও মানুষের মতো মান অভিমান করেছে। একদিন একনাগড়ে ৩৬ ঘণ্টা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রকৃত মায়ের মতোই গণেশের পাশাপাশি সেও খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তার অসুখ হয়েছে ভেবে ডাক্তারকে খবর দিয়েছে গণেশের সেবা-শুশ্রূষার জন্য বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে লেবু মিশ্রিত বার্লি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেতাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শেষে ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়েছে। এমনকি  ডাক্তারের ফি দেওয়ার জন্য নিজের অলংকার বন্ধক দিয়েছে অর্থাৎ সন্তানের জন্য মা যেমন নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকেন ঠিক তেমনি গণেশ জননী গণেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেনএক কথায় মা যেমন সন্তানকে স্নেহ করেন ঠিক তেমনি প্রতিপালক ভদ্রলোকটি স্ত্রীও গণেশকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। লালন পালন করেছেন। এবং মান অভিমানও করতেন। তাকে কেন্দ্র করে জীবনের আনন্দ-বেদনা খুঁজে পেয়েছেন। এইভাবে গণেশের প্রতি সন্তান স্নেহে প্রতিপালকের স্ত্রী গণেশ জননী হয়ে উঠেছেন

 

) “গণেশ জননী গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নামকরণ সাহিত্যের সম্পূর্ণ তাৎপর্যকে ইঙ্গিতবহ করে তোলে। সাধারণত বিষয়, চরিত্র কিংবা তাৎপর্য কেন্দ্রিক নামকরণ হয়ে থাকে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের গণেশ জননী গল্পটি চরিত্র কেন্দ্রিক নামকরণ করেছেনগণেশ, গণেশের প্রতিপালক ও তার স্ত্রীকে কেন্দ্র করে গল্পটি আবর্তিত হয়েছেগণেশ জননীর অর্থাৎ প্রতিপালকের স্ত্রীর ভালোবাসায় সন্তান বাৎসল্য জীব জগতের সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক এক নতুন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে।

গণেশ জননী গল্পটি একটি হাতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। কচ্ছির এক ব্যবসাদার প্রাণ বাঁচানোর জন্য হাতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ভদ্রলোককে উপহার দিয়েয়েছিলেন প্রতিপালকের স্ত্রী হাতি ছোট্ট দুষ্টু দুষ্টু চোখ, শুড় দেখে আনন্দিত হয় এবং নিঃসন্তান গিন্নি আনন্দে বলে ওঠে- ও আমার গণে এসেছে। বলেই তার সামনে এক বাটি দুধ এগিয়ে দিলেন ”। অর্থাৎ নিঃসন্তান গিন্নি ছোট্ট দুষ্টু দুষ্টু চোখ, শুড় দেখে তাকে ভালবেসে ফেলেছেন। তাকে সন্তানের মত লালন পালন করেছেন। পুজোর সময় রুপোর ঘন্টা বানিয়ে দিয়েছেন। গণেশও সন্তানের মতোই গিন্নির স্নানের সময় গামছা বালতি দোলাতে দোলাতে নিয়ে গিয়েছে কিংবা রান্নাঘরে গরমের সময় পাখা দিয়ে হাওয়া করেছে তেমনি গণেশও মানুষের মতো মান অভিমান করেছে। একদিন একনাগড়ে ৩৬ ঘণ্টা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রকৃত মায়ের মতোই গণেশের পাশাপাশি সেও খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তার অসুখ হয়েছে ভেবে ডাক্তারকে খবর দিয়েছে গণেশের সেবা-শুশ্রূষার জন্য বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে লেবু মিশ্রিত বার্লি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেতাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শেষে ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়েছে। এমনকি  ডাক্তারের ফি দেওয়ার জন্য নিজের অলংকার বন্ধক দিয়েছে অর্থাৎ সন্তানের জন্য মা যেমন নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকেন ঠিক তেমনি গণেশ জননী গণেশের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেনএক কথায় মা যেমন সন্তানকে স্নেহ করেন ঠিক তেমনি প্রতিপালক ভদ্রলোকটি স্ত্রীও গণেশকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। লালন পালন করেছেন। এবং মান অভিমানও করতেন। তাকে কেন্দ্র করে জীবনের আনন্দ-বেদনা খুঁজে পেয়েছেন। এইভাবে গণেশের প্রতি সন্তান স্নেহে প্রতিপালকের স্ত্রীও ‘গণেশ জননী হয়ে উঠেছে এবং নামকরনকে তাৎপর্যবাহী করে তুলেছে।

ছ) “গণেশ জননী গল্পে গণেশের প্রতিপালক ভদ্রলোকের চরিত্র বিশ্লেষণ করো

উত্তরঃ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের গণেশ জননী গল্পে গণেশের প্রতিপালক মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকমফস্বলে একটি গ্রামে বাস করেন তিনি সহজ-সরল এক গৃহস্থ মানুষ। তাকে দেখতে জমিদারের গোমস্তারতো, মনে হলেও তিনি ছিলেন উদার বিনয়ী প্রকৃতির মানুষপায়ে ক্যম্বিসের জুতা আর পরনের মলিন জামা কাপড় থাকলেও তার মনে কোনো মলিনতা ছিল না। সে স্টেশন থেকে বাড়ি পর্যন্ত খুব বিনয়ের সাথে চিকিৎসককে আপ্যায়ন করেছেন।

প্রতিপালক উদার ও বিনয়ী ছিলেন বলেই মাঠে পাওয়া অজ্ঞান কচ্ছির ব্যবসায়ীকে সেবা-শুশ্রূষা করে তার জীবন দান করেছেন উপহারস্বরূপ হাতিটিকে গ্রহণ করে সন্তান স্নেহে লালন পালন করেছেন। গণেশের প্রতিপালক নিঃসন্তান ছিলেন তাই গণেশকে নিয়েই তাদের মান অভিমান তিনি বলেছেন- আমাদের ছেলেপিলেও হয়নি, ওই গণেশ আমাদের সব”। অর্থাৎ সন্তান স্নেহে তিনি পিতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন এই কারণে একশ বিঘা জমির উৎপাদনে গণেশের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।  আর ঘরের দরজা বড় বড় করে কেটে দিয়ে গণেশের চলাফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন গণেশের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেলেও গণেশের প্রতিপালক দ্বিধাবোধ করেনি। প্রকৃত পিতার মতোই সন্তান গণেশের অসুখের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন স্টেশন থেকে বিনয়ের সঙ্গে ডাক্তারবাবুকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন এই কারনে লেখক বুঝতে পেরেছেন যে, “হাতি পুষিবার নানাবিধ অসুবিধার কথা সাড়ম্বরে বর্ণনা করিয়া গৃহিণীর ঘাড়ে তিনি দোষ চাপাচ্ছেন বটে, কিন্তু গণেশকে লইয়া তিনি যে সত্যই বিব্রত তাহা তাহার হাসিমুখ দেখিয়া মনে হইল না”। এককথায় গণেশকে নিয়ে তিনিও অনেকটা সুখি ছিলেন।  এইভাবে গল্পটিতে গণেশের প্রতিপালক গ্রাম্য মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষ হয়েও দায়িত্ববান, উদার ও বিনয়ী পিতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

 

 


No comments

Powered by Blogger.