ভাত মহাশ্বেতা দেবী
ভাত
মহাশ্বেতা
দেবী
লেখক
পরিচিতিঃ
মহাশ্বেতা দেবী বিশশতকের অন্যতম সাহিত্যিক। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই
জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম মনীশ ঘটক, মাতা ধরিত্রী দেবী। তিনি কর্মজীবনে বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজে ইংরেজি অধ্যাপকের কাজে স্থায়ী হন এবং ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামে গঞ্জে ঘুরে
সাধারণ মানুষের জীবন দেখেছেন। তাদের জীবন যুদ্ধে শরিক
হয়েছেন। এ সমস্ত অভিজ্ঞতাই তার সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি শুধু লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে আদিবাসী সমাজ ও
সর্বহারা মানুষের জীবনের মানোন্নয়নের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।
তার প্রথম মুদ্রিত লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা’ নিয়ে ১৯৩৯ সালে খগেন্দ্রনাথ মিত্র সম্পাদিত রং ‘মশাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ
ঝাঁসির রানী সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকা
প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাস নটি হুমায়ুন কোভিদ সম্পাদিত
চতুরঙ্গ পত্রিকার 957 সালে প্রকাশিত হয় তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল অরণ্যের
অধিকার কোভিদ জীবন ও মৃত্যু তিতুমীর হাজার চুরাশির মা ইত্যাদি এছাড়াও তিনি
ত্রৈমাসিক বর্তিকা নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তার সাহিত্য কর্মের জন্য জীবনে
বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছেন অবশেষে 2016 সালে এই প্রতিভাময়ী লেখিকা
মৃত্যুবরণ করেন
ভাত
গল্পের উৎসঃ
ভাত
গল্পটি ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘ম্যানিফেস্টো’
পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে ‘দেশ পাবলিশিং’ থেকে প্রকাশিত ‘মহাশ্বেতা
দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্পের’ অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘শ্রেষ্ঠ গল্প সংকলন’ থেকে
সংকলন থেকে ‘ভাত’ গল্পটি নেওয়া হয়।
ভাত
গল্পের বিষয় সংক্ষেপ
মহাশ্বেতা
দেবী রচিত ভাত গল্প হলো গ্রামের এক সর্বহারা নিরন্ন মানুষের গল্প গল্পের
কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব নাইয়া সবাই তাকে উৎসব বলে ডাকে মাতলা নদীর বিধ্বংসী জলের
তোড়ে সে তার স্ত্রী পুত্রকন্যা হারিয়েছে নষ্ট হয়েছে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও
দু'মুঠো ভাতের আশায় গ্রামের মেয়ে বাসিনীর মনি বাবুর বাড়িতে হাঁটার জন্য
কলকাতায় এসেছে উৎসব সেখানে নাকি ভাত এর ছড়াছড়ি সেখানে বাধা থেকে বিভিন্ন
প্রকারের চালাসে উৎসব ও ভাগ হয় এদিকে মনিপুর তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য সবাই
তান্ত্রিক এর শরণাপন্ন উৎসব এই পরিস্থিতিতে সেই বাড়িতে হাজির হয় অভুক্ত অবস্থায়
সারাদিন কাঠ কেটে কাঠ কাটে সে অথচ ভাত জোটে না সকলেই কর্তাবাবুকে নিয়ে নানাভাবে
ব্যস্ত দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে মন্দিরের চাতালে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তার ঘুম
ভাঙ্গে কারো ধাক্কায় শুনে করতাবাবু গত হয়েছেন বাড়ীর সব খাবার ওরা ফেলে দিচ্ছে
উৎসব ভাতের হাড়িতে নিজের জিম্মায় নিয়ে ছুটে যায় স্টেশনে সেখানে বসে পাগলের মতন
দুই হাতে হাত খেতে থাকে মনে মনে তার হারানো স্ত্রী পুত্র-কন্যাদের ভাত খাইয়ে দেয়
তারপর হাড়ির কানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে উৎসব পরদিন সকালে হারিয়ে চুরির
অপরাধে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় একজন সর্বহারা মানুষের আখ্যান ভাত যার জীবনের
সব সুখ সব আনন্দ চিরতরে হারিয়ে গেছে মাতলা নদীর বন্যা সে দুমুঠো ভাত কে আঁকড়ে
ধরেই জীবনের সংগ্রামে টিকে থাকতে চায় সেই ভাত এর জন্যই গল্পের শেষে সে শাস্তি
পায় এই হৃদয়বিদারক কাহিনীটিকে লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পের উপস্থাপিত
করেছেন এর পাশাপাশি সামাজিক কুসংস্কার বিলাসব্যসন গরিব মানুষের প্রতি উচ্চবিত্তের
উদাসীনতা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার রূপ পারিবারিক বন্ধন সবকিছুই গল্পকার উৎসব
চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সব মিলিয়ে গল্পটি প্রকৃতির নিঃস্ব হয়ে যাওয়া
বাংলার এক প্রান্তিক মানুষের হাহাকার যা আবহমানকাল ধরে বাংলার এক স্বাভাবিক চরিত্র
নামকরণের
সার্থকতা বিচার করো মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব বলে ডাকে
পুরো নাম উত্তম নাইয়া মান্নার তোর এসে চিরতরে তার পরিবার সন্তান সমস্ত হারিয়েছে
আজ তার কেউ নেই সে তার গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর করতাবাবু অর্থাৎ মনিদের
বাড়িতে কলকাতা এসেছে দুদিন ফেলেছে রে ভাত খাবে এদিকে কুত্তা বাবুর বাড়িতে হোম
যজ্ঞ হচ্ছে উৎসব এখানে অসহায় কাজ আছে ভাত নেই কিন্তু ভাতের অভাব নেই বাদা থেকে
চাল আসে তান্ত্রিক এসেছে জিঙ্গেস হালচাল কোন প্রাণী আরো অনেক চালের ভাতের আয়োজন
হয়েছে কিন্তু উৎসবের ভাত মিলেনা সে কাজ করতেই থাকে ওদিকে বুড়ো কর্তা বাবুরা
কল্যাণ কামনায় পুরোদমে হোম যজ্ঞ চলতে থাকে উৎসব চোখে স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতেই থাকে
সে ভাত খাবে ভাত খাবে
গ্রামের
সতীশবাবু মনে করে উৎসবের বুদ্ধি লোপ পেয়েছে সব হারিয়ে বসে ভাত ভাত করছে তবে
সতীশবাবু সেটা বোঝার কথা নয় কারণ তার সব আছে কিন্তু সব হারিয়ে উৎসব যে প্রেত
হয়ে গেছে ভাত পেলেই সে পুনরায় মানুষ হবে ভারতের লোক লোভে একসাথে আড়াই মণ কাঠ
কাটছে নইলে তার শরীরে ক্ষমতা ছিল না কিন্তু এরপরও সে ভাত পেল না কারণ সকলেই তখন
ব্যস্ত তান্ত্রিকের অনুষ্ঠানে উৎসব মন্দিরের চাতালে ঘুমিয়ে পড়ে ঘুম ভেঙ্গে শুনতে
পায় করতাবাবু গত হয়েছেন বড় পিশি বাসিনি কে বলেন রান্না পথে ঠেলে দিয়ে দিগে যা
উৎসব চমকে ওঠে সে বুঝে এসব ভাতেরা ফেলে দিতে যাচ্ছে উৎসবের মাথায় বুদ্ধি খেলে
যায় সে বড় দেশ কি তা নিয়ে নেয় নিজের জিম্মায় বলে দূরে ফেলে দিয়ে আসে এরপর সে
দৌড়াতে থাকে তার চেহারায় তখন বর্ণ হিংস্রতা ভাত শেখাবে ছুটে চলে যায় সে স্টেশনে
খাবলে খাবলে ভাত খায় হারি থেকে মুখ দুবিয়ে খায় জল খায় তারপর শাড়ির কানায় মাথা
দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পরদিন পেতলের দেশকে চুরির অপরাধে সকলে তাকে ধরে মারতে মারতে
থানায় নিয়ে যায় আসল বাঁধাটা তার কাছে অধরাই থেকে যায় সারা কাহিনী জুড়েই
উৎসবের ভাত খাওয়ার জন্য মরিয়া মানসিকতা দেখা যায় ভাত ছাড়া যে মনুষ্যত্ব জীবিত
থাকে না সে উল্লেখ্য এই কাহিনীতে পাওয়া যায় পেটের খিদে যে সর্বস্ব হারানোর
দুঃখের চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক সেই ভক্ত গল্পের পরোতে পরোতে ধরা পড়েছে যে
ভাতের জন্য উৎসব স্ত্রী-সন্তানের শ্রাদ্ধ করে না সেই উৎখাতের কারণে সে গল্পের শেষে
অপরাধী হয়ে যায় ভারতকে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনী এবং তার প্রধান চরিত্র উৎসবের
ক্রিয়া-কলাপ আবর্তিত হয়েছে তাই সমস্ত দিক থেকেই গল্পটির ভাত নামকরণ সম্পূর্ণ
প্রাসঙ্গিক
অতি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মূল্য 1 উৎসবের আসল নাম কি উৎসবের আসল নাম
হলো উৎসব উৎসব নাইয়া উৎসব কার জমিতে কাজ করতো উৎসব সতীশ বাবুর জমিতে কাজ করতো কার
মঙ্গলকামনায় যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল বাসিনেস বুড়ো কর্তার মঙ্গল কামনায়
যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল বাসিনী লুকিয়ে উৎসবকে কি খেতে দিয়েছিল বাসিনি উৎসবকে
ছাতু খেতে দিয়েছিল
সংক্ষিপ্ত
প্রশ্নোত্তর প্রতিটি প্রশ্নের মান 2 3 উৎসবের চেহারা ও বেশভূষার বর্ণনা দাও
মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব লোকে তাকে উৎসব বলে ডাকে তার
পুরো নাম উৎসব নাইয়া তার পিতার নাম হরিচরণ নাইয়া নিম্নবর্গীয় সমাজব্যবস্থার
একজন প্রতিনিধি ভাগ্যের পরিহাসে বন্যায় বউ ছেলেমেয়েকে হারিয়ে ফেলে তার মাথা
গোঁজার আশ্রয়টুকুও থাকেনা প্রিয়জন হারানোর চেয়ে হারানোর দুঃখের চেয়ে ভাতের
জন্য হাহাকারে তার কাছে বড় হয়ে উঠেছে
সুখে
দুঃখে উৎসব বিভ্রান্ত হয়ে উঠেছে তাকে দেখতে তার চেহারাটা বুনো বুনো বর্ণ প্রকৃতির
চাহনি কোমর পর্যন্ত পর্যন্ত ছোট
উৎসবের
খিদের বর্ণনায় ভাত গল্পের মূল বিষয় যুক্তিসহ আলোচনা করো এর উত্তরের জন্য বিষয়ে
সংক্ষেপে লেখ
কলকাতা
থেকে গিয়ে খেয়ে নে খেয়ে আসি কে বলেছে উৎসবের গ্রাম সম্পর্কে দিদি বাসিনি মনিবের
বাড়িতে যেতে ইচ্ছুক একথা বলেছে
মাত্রার
মাতলা নদীর প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে প্রবল ঝড় বৃষ্টি ও মাতলা নদীর বন্যায় ঘরবাড়ি
স্ত্রী সন্তানকে হারিয়ে উৎসব পাগল হয়ে যায় লঙ্গরখানা খিচুড়ি না খেয়ে উৎসবের
শরীর ক্লান্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল ঠিক ঐ সময় কলকাতায় গিয়ে গ্রাম তো বোন বাসিনীর
মনি বাড়িতে এসে পেট ভরে ভাত খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে কলকাতা যাওয়ার পর
মাতলা
নদীর বন্যায় প্রবল ঝড় বৃষ্টি ও মাতলা নদীর বন্যায় স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের
হারিয়ে শোকে পাগল উৎসব বেশ কিছুদিন অভুক্ত অভুক্ত থাকে তারপর ভাতের আশায় চলে আসে
তার গ্রাম দুটো বোন বাসিনীর মনি বাড়ি কলকাতায় সেখানে ভাত খাওয়ার বিনিময়ে সে
তাকে সেই বাড়ির বুড়ো কর্তার আয়ু বৃদ্ধির জন্য ওরা হোম যজ্ঞের কাঠ কাটতে হয়েছিল
এদিকে তান্ত্রিকের বিধান অনুযায়ী যোগ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়া
বারণ ছিল খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে পড়া উৎসব ভাত খেতে পারেনি মাঝে বাসিনীর
দেওয়া ছাতু জল দিয়ে খেয়ে খিদে মেটানোর চেষ্টা করেছ যদিও এই সামান্য খাবারের তার
পেট ভরেনি কাঠ কাটা শেষ করে বাইরে বাড়ির বাইরে গিয়ে উৎসব তাই শিব মন্দিরের
বারান্দায় বসে সেখানে শুয়ে ক্লান্তির ভারে ক্ষুধার তাড়নায় এবং স্ত্রী
সন্তানদের স্মৃতিতে কাতর হয়ে কাততে কাততে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে অনেকক্ষণ পর একজনের
পায়ের ধাক্কায় ঘুম থেকে জেগে উঠে সে দেখে যে রাস্তায় বেশ কয়েকটা গাড়ি
দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বাড়ির সামনে লোকে লোকের ছোট ছোট ছোট জেলা বুঝতে পারে মারা
গিয়েছে তার মৃত্যুতে সমস্ত রকমের ভাত ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওষুধগুলো এক
দেশকে নিয়ে সে স্টেশনের দিকে রওনা দেয় সেখানে সে বুঝতে পারে তাদের বাঁধা সমস্ত
জাতি কলকাতার এই বড়লোকদের বাড়িতে বন্দি হয়ে আছে সে ভাত খেয়ে প্রকৃত বাদার খোঁজ
করতে চেয়েছে কিন্তু স্টেশনে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায় প্রকৃত বাদার খোঁজ করা
সম্ভব হয়নি একদিক দিয়ে অভুক্ত নিম্নবিত্ত শ্রেণীর জীবন সংগ্রাম কে যেমন উপলব্ধি
করেছেন তেমনি উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের স্বেচ্ছাচারিতা ও কুসংস্কারচ্ছন্ন
কিন্তু
সাগরে শিশির পড়ে ব্যাখ্যা করো মহাশ্বেতা দেবীর ভাত
এ
যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্প থেকে আলোচ্য উক্তিটি
নেওয়া হয়েছে উক্তিটিতে উৎসব নাইয়া অভক্ত উৎসব নাইয়া খিদে প্রসঙ্গে প্রভাবক
ক্ষুধার কথা বলা হয়েছে
এ
যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ভাত গল্প ছোটগল্প থেকে নেওয়া
আলোচ্য উক্তিটিতে উৎসব নাই আর দেহের ক্ষমতা ও ক্ষুধার কথা বলা হয়েছে
সাগরে
একটি শিশিরবিন্দু যেমন কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারে না তেমনি অনেকদিনের অভুক্ত
উৎসবের পেটে বাসিনীর দেওয়া ছাতু কোন পরিবর্তন আনতে পারে না
No comments