রামায়ণ বুদ্ধদেব বসু
বুদ্ধদেব বসু
রামায়ণ
জন্মঃ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের
৩০ নভেম্বর (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ১৫ই অগ্রাহণ)।
মৃত্যুঃ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের
১৮ই মার্চ (১৩৮০ বঙ্গাব্দের ৪ চৈত্র)।
১. রামায়ণ প্রবন্ধটি সাহিত্যচর্চা
গ্রন্থের অন্তর্গত।
২. এই গ্রন্থের অন্তর্গত
প্রবন্ধগুলির রচনাকাল ১৯৪৬ – ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ।
৩. প্রবন্ধটি কবিতা ৫৩
: ১২/৩ চৈত্র ১৩৫৩ তে প্রকাশিত হয়।
৪. প্রবন্ধটির পরিচ্ছেদ
সংখ্যা – ৬।
৫. বুদ্ধদেব বসু জীবনে
প্রথম ছন্দের আনন্দ ও কবিতার উন্মাদনা উপলব্ধি করেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর “ছোট্ট
রামায়ণ” গ্রন্থে।
৬. বইটি ছোট্ট, সচিত্র,
বিচিত্র – মধুর। বুদ্ধদেব বসুর প্রিয় সঙ্গী
ছিল।
৭. বুদ্ধদেব বসু যোগীন্দ্রনাথ
সরকারের পদে আদর খেত।
৮. মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের
‘শিশু’ পত্রিকার পাতাবাহারে লেখকের চোখ জুড়াত।
৯. বাঁশের তীর ধনুক নিয়ে
বাড়ির উঠোনের রঙ্গমঞ্চে রামলীলার অভিনয় করত।
১০. লেখক নিজেই রাম ও
লক্ষ্মণের অভিনয় করত। আর মাচার লাউ কুমড়ো গুলোকে
তাড়কা রাক্ষসী বলেছে।
১১. সেই অভিনয়ে সীতা ও
রাবণকে না হলেও চলত। তাদের জন্যই রাম-লক্ষ্মণের বনবাসের স্ফুর্তিটা লেখকের মাটি হ্যেছে।
১২. নদী, বন, পাহাড়,
- পম্পা, পঞ্চবটি, চিত্রকূট – লেখকের মতে এইসব এক একটি ছবির নাম। এগুলি ছবির মতো গানের
মতো।
১৩. উপেন্দ্রকিশোর মুখবন্ধে
লিখেছে –
বাল্মীকির তপবন তমসার
তীরে,
ছায়া তায় মধুময়, বায়ু
বহে ধীরে।
খড়ের কুটির খানি গাছের
ছায়ায়,
চঞ্চল হরিণ খেলে তার আঙিনায়।
রামায়ণ লিখিলেন সেথায়
বসিয়া,
সে বড়ো সুন্দর কথা, শোনো
মন দিয়ে।
১৪. লেখকের সঙ্গে কৃত্তিবাসের
পরিচয় হয় একটু বড়ো হয়ে ।
১৫. কৃত্তিবাস লেখককে
দুই অর্থে কাঁদিয়েছে – এক. সীতার দুঃখে। আর দুই. অসম্ভব ভালোলাগার স্মৃতি থেকে।
১৬. কৈশোরের কাছাকাছি
লেখক মূল বাল্মীকি উপহার পেয়েছিলেন। কিন্তু বইটা পরে হারিয়ে যায়।
১৭. কালীপ্রসন্ন সিংহের
অনুবাদে লেখক মূল মহাভারতের স্বাদ পেয়েছিলেন।
১৮. বাল্মীকি আর বাঙালির
মধ্যে দেবভাষার ব্যবধান উনিশ শতকেও ঘুচেনি তার অন্যত্ম কারণ হল- তার অত্যধিক লোকপ্রিতা।
১৯. লেখকের মতে, কৃত্তিবাস
বাল্মীকির বাংলা অনুবাদক নন, তিনি রামায়ণের বাংলা রূপকার।
২০. কৃত্তিবাসের কাব্যে
রাম-লক্ষ্মণ সীতা , দেব-দানব সবাই বাঙালির
চরিত্র।
২১. কৃত্তিবাসী রামায়ণের
প্রাকৃতিক এবং মানসিক আবহাওয়া একান্তই বাংলার।
২২. বাল্মীকি কৃত্তিবাসের
আত্মার প্রভেদ বোঝাতে রবীন্দ্রনাথের “কচ ও দেবযানীর” সঙ্গে মহাভারতের “দেবযানীর”উপাখ্যানের তুলনা করেছেন।
২৩. বুদ্ধদেব বসুর মতে,
আদি কবির চরিত্র লক্ষণ জানতে হলে আদি কবিদেরই স্মরণাগত হতে হবে।
২৪. কৃত্তিবাসের রম্যকাননে
বা কাব্যে আদি কবি বাল্মীকির ধ্রুপদী সাহিত্য খুঁজতে গেলে- আমাদের ভুল হবে।
২৫. বাল্মীকিতে রামের
বনবাসের খবর পেয়ে লক্ষ্মণ খাঁটি গোয়ারের মতো বলেছে – “ওই কৈকেয়ী ভজা বুড়ো বাপকে আমি
বধ করব”।
২৬. বনবাসের উদ্যোগের
সময় রাম সীতাকে বলেছে – “ভরতের সামনে আমার প্রশংসা কর না, কেননা রিদ্ধিশালী পুরুষ অন্যের
প্রশংসা সইতে পারে না।
২৭. লঙ্কা কাণ্ডে রাম
সীতাকে ত্যাগ করলেন। সীতা তখন রামকে প্রাকৃতজন বা ছোটোলোক বলেছিলেন।
২৮. রাম সতিত্ব, পুত্রত্ব,
ভাতৃত্বের আদর্শ রক্ষার খাতিরে সীতাকে পরিত্যাগ করেন। সে জন্য দীনেশচন্দ্র সেন তার
তারিফ করেন।
২৯. দীনেশচন্দ্র সেনের
তারিফ করাটা লেখকের মতে ঐতিহাসিক ছিল। তৎকালীন বঙ্গসমাজের পটভূমিকায় এর সমর্থনও হয়তো
খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
৩০. আদি কবির লক্ষণ, পৃথিবীর
আদি মহাকাব্যে বৈশিষ্ট্য বলতে লেখক বুঝিয়েছেন বাস্তবতাকে।
৩১. মহাকাব্যের বাস্তবতা
সম্পূর্ণ নিরাসক্ত ও নির্মম। তার তুলনায় আধুনিক পাশ্চাত্য রিয়ালিজমের চরম নমুনাও মনে
হয় দয়ার্দ্র।
৩২. লেখকের মতে, মহাকাব্য
সত্যের নির্বিকার দর্পন।
৩৩. মহাকাব্যে ট্রাজেডির
মত্ততা নেই। কমেডির উছ্বলতা নেই। তাতে গলা কখনও কাঁপে না। গলা কখনও চড়ে না। বড়ো ঘটনা
ও ছোটো ঘটনায় ভেদ নেই। সমস্তই সমান, আগাগোড়াই সমতল, সমস্তটাই ঈষৎ মাত্রায় ক্লান্তিকর।
৩৪. সচেতন শিল্পকর্ম মানুষের মনে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত
মহাকাব্য কিশোর বয়সের সৃষ্টি।
৩৫. মহাভারতে দেখতে পাই
চিরকালের সমস্ত মানব জীবনের প্রতিবিম্বন।
৩৬. শুধু পৃষ্ঠা সংখ্যা
নয়, জীবন দর্শনের ব্যপ্তিতে রামায়ণ মহাভারতের চেয়ে অনেক ছোটো কিন্তু কাব্য ও কাহিনি
হিসেবে অনেক সমৃদ্ধতর।
No comments