কারক ও কারকের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ
কারক
কারক শব্দটির
তৎসম বা সংস্কৃত।
ব্যুৎপত্তিগত ভাবে
কারক কৃ ধাতু ণক বা অক প্রত্যয় দিয়ে
গঠিত।
এখানে কৃ ধাতু মানে করা আর ণক বা অক প্রত্যয় মানে সম্পাদন করা। অতএব যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।
বাক্যের অন্তর্গত
ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের সম্পর্ককে কারক বলে।
কারক জানতে গেলে বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের নাম প্রথমে জানতে হবে।
বাক্যের অন্তর্গত
ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের সম্পর্ককে কারক বলে।
কারক জানতে গেলে বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের নাম প্রথমে জানতে হবে।
ছয় প্রকার কারক সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ক) কর্তৃকারক
যদু
বই লিখেছে।
এই
বাক্যে ক্রিয়া হলো লিখেছে। আর
বাক্যে কর্তা হলো যদু। যদু
লেখা কাজটা করেছে।
তাহলে কর্তা যদু সরাসরি ক্রিয়া সম্পাদন
করছে। অতএব, এখানে কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার কর্তা
সম্বন্ধ। তখন বাক্যের অন্তর্গত কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার
সম্পর্ককে কর্তৃকারক বলে।
কর্তৃকারক
নির্ণয়ের পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. বাক্যের
ক্রিয়াটি দিয়ে ‘কে, কার,
কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। উত্তর
পেলে কর্তা হবে।
৩. তবে মনে
রাখতে হবে, কর্তা স্বয়ং সরাসরি ক্রিয়া সম্পাদন করবে।
যেমন - আমি বই লিখেছি।
লঞ্চ নদীতে ভাসছে। ইত্যাদি বাক্যে কর্তা সরাসরি তার ক্রিয়া
সম্পাদন করছে।
বিভিন্ন প্রকার
কর্তৃকারক
ক. ১. প্রযোজক
কর্তা – নিজে না করে অপরকে দিয়ে ক্রিয়া
সম্পাদন করে।
যেমন
–
দাদা নাতিকে
চাঁদ দেখাচ্ছে।
শিক্ষক ছাত্রদের
পড়াচ্ছে।
ক. ২. প্রযোজ্য
কর্তা – কর্তা যাকে দিয়ে ক্রিয়া সম্পাদন করে।
দাদা
নাতিকে চাঁদ
দেখাচ্ছে।
শিক্ষক
ছাত্রকে পড়াচ্ছে।
ক. ৩. সমধাতুজ
কর্তা – একই ক্রিয়ার ধাতু থেকে
নির্গত কর্তা।
শিমুল
গাছটার বড় বাড়
বেড়েছে।
এমন
অনেক ঘটনা সাধারনত ঘটে না।
বাক্যের ক্রিয়া
ও কর্তা একই ধাতু নির্গত হলে
সমধাতুজ কর্তা বলে।
ক. ৪. উহ্যকর্তা
– বাক্যে কর্তা লুপ্ত থাকে।
চা
খাচ্ছি।
চলে
যাচ্ছে।
কোথায়
যাচ্ছ।
প্রত্যেকটি বাক্যে
কর্তা লুপ্ত বা উহ্য হয়ে আছে।
ক. ৫. নিরপেক্ষ
কর্তা - অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা
আমি
গেলেও তোমার যাওয়া হবে।
চাঁদ উঠলে জ্যোস্না
দেখা যাবে।
বাক্যের
অন্তর্গত দুইটি ক্রিয়া থাকবে। একটি সমাপিকা
ক্রিয়া অপরটি অসমাপিকা ক্রিয়া।
অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে।
ক. ৬. ব্যতিহার কর্তা
- কর্তারা প্রতিযোগিতা বা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে উঠে।
রাজায়
রাজায় যুদ্ধ করে, উলুখাগড়ার
প্রাণ মানুষের প্রাণ হরে।
ক. ৭. সহযোগি কর্তা
– কর্তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে
পিতা-পুত্র
একসঙ্গে থাকে।
বাঘে-গরুতে এক
ঘাটে জল খায়।
ক. ৮. সাধন
কর্তা – উপকরণ যদি কর্তা হয়।
ঢেঁকি
স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে।
এখানে
উপকরণকে কর্তা হিসেবে নির্দেশ করেছে।
ক. ১১. আলংকারিক
কর্তা - অচেতন বস্তুতে চেতনা আরোপ করা।
আকাশ
আমায় শিক্ষা দিল।
মুক্তবেণী
পিঠের পরে লোটে।
অচেতন বস্তুতে
চেতনার করা আকাশ আমায় শিক্ষা দিল মুক্তবেণী পিঠের পরে লোটে
ক্লাস পেতে ক্লিক করুন - https://youtu.be/-wbVufd0l5U
খ. কর্মকারক
আমি বই
লিখেছি।
এই বাক্যে
ক্রিয়া লিখেছি। কর্তা ‘আমি’ ‘বইকে’
আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করছে। অতএব ‘বই’ হল
কর্ম। কর্মের সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে
কর্মকারক বলে।
সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কি’ বা ‘কাকে’ বা ‘কাদের
দিয়ে’ প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটাই
কর্মকারক।
কর্মকারক নির্ণয়ের
পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ বা ‘কাদের
দিয়ে’ প্রশ্ন করে
উত্তর বের করতে হবে।
৩. কর্তা
যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে, সেই পদকে কর্ম হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
বিভিন্ন
কর্মকারক
খ. ১. মুখ্য ও গৌণ কর্ম - অপ্রাণিবাচক ও প্রাণিবাচক কর্ম
দাদু
নাতি বই পড়াচ্ছে।
খ. ২. উদ্দেশ্য
ও বিধেয় কর্ম - প্রধান কর্ম ও পরিপুরক কর্ম
অর্থকেই লোকে
পরমার্থ জ্ঞান করে।
পরমহংসদেব
টাকাকে মাটি আর মাটিকে টাকা মনে
করতেন।
সাধারণত
উদ্দেশ্য কর্ম বিভক্তিযুক্ত আর বিধেয়কর্মটি
বিভক্তি শূন্য হয়।
খ. ৩. সমধাতুজ
কর্ম – ক্রিয়া ও কর্ম একই ধাতু নিস্পন্ন
অসীম
স্নেহের হাসি হাসিতেছে।
একবার
চোখের দেখা দেখে যাই।
খ. ৪.
উহ্য কর্ম - কর্ম লুপ্ত থাকে
মহেশ খাচ্ছে।
শকুন্তলাকে মেরেছে।
খ. ৫.
কর্মে বীপ্সা - কর্মের পুনরাবৃত্তি
জনে জনে ডেকে বলেছি।
গ. করণকারক - অবলম্বন
অর্জুন
টাকা দিয়ে বই কিনেছে।
এই বাক্যে
ক্রিয়া কিনেছে। কর্তা ‘অর্জুন’
টাকার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করেছে।
সাধারণত বাক্যের ক্রিয়াপদ যার দ্বারা ক্রিয়া
সম্পাদন করে। তাই করণ।
করণকারক
নির্ণয়ের পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কি দিয়ে’ বা ‘কার
দ্বারা’ দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর বের করতে
হবে।
৩. মনে
রাখতে হবে কর্তা অবলম্বন করে ক্রিয়াটি সম্পাদন করবে।
ঘ. নিমিত্ত
কারক – জন্য (একে সম্প্রদান
কারকও বলে)
আলোর
জন্য মোম জ্বালিয়েছি।
দিন দুঃখীকে
অন্নবস্ত্র দেওয়া উচিৎ।
নিমিত্ত কারক নির্ণয়ের
পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কিসের জন্য’ বা ‘কার
জন্য’ দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর বের করতে
হবে।
৩. তবে
মনে রাখতে হবে কর্তা কারো জন্য ক্রিয়াটি সম্পাদন করবে।
এখানে
নিঃস্বার্থ দান অর্থেও হতে পারে। কারণ সংস্কৃতি সম্প্রদান
কারক বাংলায় নিমিত্ত কারকের রূপ গ্রহণ করে।
* কখনও
কখনও ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে অর্থ বুঝে কারক নির্ণয়
করতে হবে।
ঙ. অপাদান কারক - যা
থেকে বিচ্ছিন্ন বা বিচ্যুতি।
গাছ থেকে
পাকা আম পড়ল।
অপাদান
কারক নির্ণয়ের পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কোথা থেকে’
দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর বের করতে হবে।
৩. তবে
মনে রাখতে হবে বিচ্যুতি বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে গিয়ে বা স্থান চ্যুতি ঘটিয়ে
ক্রিয়াটি সম্পাদন করবে।
শ্রেণি |
উদাহরণ |
স্থান বাচক |
পকেট থেকে কলমটা পরে গেল। |
কালবাচক |
সকাল থেকেই বই পড়ছি |
দূরত্ববাচক |
নয়ারহাট থেকে 2 কিঃমিঃ দূরে আমার বাড়ি |
অবস্থানবাচক |
ছেলেরা ছাদ থেকে ঘুড়ি
ওড়াচ্ছে |
তারতম্য বাচক |
অপমানের চেয়ে মৃত্যু ও ভালো |
চ. অধিকরণ
কারক - ক্রিয়ার আধার।
টেবিলে
বই আছে।
সকালে
ঘুম থেকে উঠি।
কর্তা যে আধারে বা
কালে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে অধিকরণ কারক বলে।
অধিকরণ কারক নির্ণয়ের
পদ্ধতি
১. প্রথমে
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বের করতে হবে।
২. সাধারণত
ক্রিয়াকে ‘কোথায়, কখন, কবে’
দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর বের করতে হবে।
No comments