কারক ও কারক নির্ণয়ে পদ্ধতি
কারক
কারক শব্দটির
তৎসম বা সংস্কৃত।
ব্যুৎপত্তিগত ভাবে
কারক কৃ ধাতু ণক বা অক প্রত্যয় দিয়ে
গঠিত।
এখানে কৃ ধাতু মানে
করা আর ণক বা অক প্রত্যয় মানে সম্পাদন করা। অতএব যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।
অনেকে মনে করেন,
কারক শব্দটি প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয়
ভাষার কাড ধাতু থেকে এসেছে। (Harper, Douglas। "case"। Online Etymology
Dictionary)
কারক শব্দের
অর্থ যিনি করেন বা শ্রষ্টা বা
নির্মাতা বা অনুষ্ঠানেতা।
কারক শব্দের ইংরেজি
প্রতিশব্দ "case"।
কারক শব্দটির একটি
বিশেষ্য পদ।
পাণিনির মতে ‘ক্রিয়ান্বয়ী
কারকম’ অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত
অন্যান্য পদের সম্পর্ক।
অন্যন্য পদ বলতে,
বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও অব্যয়
পদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে।
তবে পাণিনির মতে
বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে।
সংজ্ঞা - বাক্যের
অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের সম্পর্ককে কারক বলে।
কারক জানতে গেলে
বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের নাম প্রথমে
জানতে হবে।
ক্রিয়াপদটি সমাপিকা
ক্রিয়া হবে।
যেমন -
নুপুর বই পড়ছে।
এই বাক্যে ‘পড়ছে’ পদের
দ্বারা ক্রিয়া বা কিছু করা বোঝানো হয়েছে। অতএব ‘পড়ছে’
ক্রিয়াপদ।
অর্থাৎ যে পদের
দ্বারা হওয়া, ঘটা, করা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
অন্যদিকে,
নামপদ হল শব্দের সঙ্গে বিভক্তিযুক্ত পদ। ভাব প্রকাশের
জন্য বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন - রাম
বিদ্যালয়ে যায়। এখানে ‘বিদ্যালয়ে’ পদে
শব্দ আছে ‘বিদ্যালয়’ তার
সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে বিদ্যালয়ে পদে
পরিণত হয়। আর ‘রাম’
শব্দের সঙ্গে ‘শূন্য বিভক্তি’
যুক্ত হয়ে এটিও পদে পরিণত হয়।
বাংলায়
এইধরণের পাঁচ রকমের পদ আছে। বিশেষ্য, বিশেষণ,
সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া। এর মধ্যে
বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম পদগুলি নামপদ।
বিশেষ করে বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম পদের সঙ্গে ক্রিয়ার
সম্পর্ক তৈরি হয়।
তবে বিভিন্ন
নামপদ আর ক্রিয়াপদকে পরপর সাজালেই বাক্য হয়না। তার
জন্য অর্থগত ও ব্যাকরণগত সঙ্গতি রেখে বসাতে হবে। এক
কথায় কারক সম্পর্কএর পদগুলিকে পরপর
বসাতে হবে। তবে বাক্যটি
সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করবে।
কারক
সম্পর্কে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন
বিভক্তি, অনুসর্গ ও নির্দেশক সম্পর্কে জানতে হবে।
|
বিভক্তি |
অনুসর্গ |
নির্দেশক |
ব্যুৎপত্তিগত |
বি-ভজ্ ধাতু তি প্রত্যয় |
অনু-সৃজ ধাতু অ প্রত্যয় |
নির–দিশ ধাতু অক প্রত্যয় |
অর্থ |
বিভাজন বা বণ্টন |
বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্যকারি পদ। |
পরিচালক বা নিয়ন্ত্রক |
অবস্থান |
শব্দের পরে যুক্ত হয়ে বসে। |
পদের পরে আলাদা হয়ে বসে। |
পদের পরে যুক্ত হয়ে বসে। |
কাজ |
শব্দকে পদে পরিণত করা। |
বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করা। |
পদের বচনকে নির্দেশ করা। |
|
বিভক্তির নিজস্ব অর্থ নেই। |
অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে। |
নির্দেশকের নিজস্ব অর্থ নেই। |
উদাহরণ |
এ, তে, কে, রে, শূন্য ইত্যাদি। |
দ্বারা, দিয়া, থেকে, চেয়ে, হতে ইত্যাদি। |
টি, টা, খানা, খানি, গুলি, গিলা, গাছা ইত্যাদি। |
বাক্যের বিভিন্ন
অংশ বিস্তারিত আলোচনা করা হল –
অর্জুন আজ
মেয়ের জন্য দে’জ থেকে টাকা দিয়ে দুইটি বই কিনেছে।
পদ |
বিভক্তি |
অনুসর্গ |
নির্দেশক |
ক্রিয়া |
অর্জুন |
শূন্য |
- |
- |
- |
আজ |
শূন্য |
- |
- |
- |
মেয়ের জন্য |
- |
জন্য |
- |
- |
দে’জ থেকে |
- |
থেকে |
- |
- |
টাকা দিয়ে |
- |
দিয়ে |
- |
- |
দুইটি |
- |
- |
টি |
- |
বই |
শূন্য |
- |
- |
- |
কিনেছে |
এছে |
- |
- |
সমাপিকা ক্রিয়া |
এই বাক্যে
‘কিনেছে’ সমাপিকা ক্রিয়াপদটি অন্যান্য পদের সঙ্গে নানা ভাবে সম্পর্কে যুক্ত। এই সম্পর্কে
সাহায্য করেছে বিভক্তি, নির্দেশক ও অনুসর্গ। এই সম্পর্কই হল কারক।
বাংলায়
কারক বিভক্তির চিহ্ন দেখে নির্ণয় করা সম্ভব নয়,
অর্থ বুঝে নির্ণয় করতে হয়। তাই বাক্যের
অন্তর্গত ক্রিয়াপদ দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে উত্তর পেলে পদের সম্পর্কগুলি নির্ণয়
করা সম্ভব।
যেমন, ক্রিয়ার সঙ্গে –
কে, কার, কারা দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
কর্তৃ কারক |
কী, কাকে দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
কর্ম কারক |
কী দিয়ে, কার দ্বারা দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
করণ কারক |
কি জন্য, কাকে দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
নিমিত্ত কারক |
কোথা থেকে দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
অপাদান কারক |
কোথায়, কখন, কবে দিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর পেলে |
অধিকরণ কারক |
এইসব প্রশ্নের
ধরন অনুযায়ী কারককে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়।
একটি উদাহরণ দেওয়া হল –
‘অর্জুন আজ মেয়ের জন্য দে’জ থেকে টাকা দিয়ে দুইটি বই কিনেছে’।
সমাপিকা
ক্রিয়া – কিনেছে।
প্রশ্ন |
পদ |
ক্রিয়া সম্পাদন |
সম্বন্ধ |
কারক |
কে কিনেছে? |
অর্জুন |
কর্তা সরাসরি ক্রিয়া সম্পাদন করছে। |
কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার কর্তা সম্বন্ধ। |
কর্তৃকারক |
কী কিনেছে? |
বই |
কর্তা যার আশ্রয়ে ক্রিয়া সম্পাদন
করে। |
কর্তার আশ্রয়কে কর্ম বলে। কর্মের
সঙ্গে ক্রিয়ার কর্ম সম্বন্ধ। |
কর্মকারক |
কি দিয়ে কিনেছে? |
টাকা দিয়ে |
কর্তা যার সাহায্যে বা অবলম্বন ক্রিয়া সম্পাদন করে। |
কর্তার অবলম্বনকে করণ বলে। |
করণকারক |
কার জন্য কিনেছে? |
মেয়ের জন্য |
কর্তা যার জন্য ক্রিয়া সম্পাদন
করে। |
কর্তার প্রয়োজন বা সম্প্রদান |
নিমিত্ত কারক |
কোথা থেকে কিনেছে? |
দে’জ থেকে |
কর্তার বিচ্যুতি বা কর্তা যা থেকে ক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে। |
কর্তা যা থেকে ক্রিয়া সম্পাদন করে অপাদান সম্বন্ধ হয়। |
অপাদান কারক |
কবে কিনেছে? |
আজ |
কর্তা যে আধারে বা কালে ক্রিয়া
সম্পাদন করে। |
কর্তার আধারকে বা কালকে আধিকরণ
সম্বন্ধ বলে। |
অধিকরণ কারক |
তাহলে বোঝা গেল,
কারক নির্ণয়ে -
১. প্রথমে বাক্যের
সমাপিকা ক্রিয়া নির্ণয় করতে হবে।
২. তারপর ক্রিয়াপদ
দিয়ে কে, কী, কাকে, কি দিয়ে, কি জন্য, কোথা থেকে বা কোথায় বা কখন দিয়ে প্রশ্ন
করে উত্তর বের করতে হবে।
৩. প্রশ্নের ধরণ
অনুযায়ী কারক নির্ণয় হবে।
ক্লাস পেতে ভিডিওতে ক্লিক করুন -
No comments