৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস সম্পর্কে কিছু কথা
গালি দিতে ইচ্ছে করে
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। গালি দিতে ইচ্ছে করে। সারা বছর কাঠের ব্যবসা করল। ৫ই জুন আসতেই জমিয়ে অনুষ্ঠানের আসর বসাল। তথাকথিত ক্লাবগুলো চাটতে চাটতে সভাপতিও বানিয়ে দিল। চাটা আর পাঠাকে সত্যিই গালি দিতে ইচ্ছে হল।
সেদিনকার পাঠাদাকে দেখেছেন। আজ ৫ই জুন উপলক্ষে কি না হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা দিলেন। আর ওই সুযোগ পেলে তোমার পাশের পুকুরটাও ভরাট করে ফ্লাট বানিয়ে বড়লোক করে দেবে। বন জঙ্গল সাফা করে উন্নয়নের আকাশ চুম্বি স্বপ্ন দেখবে। জানেন তার পরিবেশ দিবস পুকুর ভরাট আর বন জঙ্গল সফকেই বলে! কাছে পেলে কিছু বলতাম। কিন্তু কি বলতাম। সবটাই তো তার দয়া....
সব জায়গায় না, বেশির ভাগ জায়গায় বিশেষ করে স্কুল কলেজগুলোতে গাছ লাগাও প্রাণ বাঁচাও শ্লোগানে ভরে উঠে। ওই ৫ই জুন। আর ৩৬৪ দিন! তার আবার একটা বা দুটা গাছ লাগিয়ে ফটো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট। একটা দুটা যে গাছ লাগাল, পরে তার কোনো খোঁজও রাখে না। মরল না বাঁচল। ওই ৫ই জুন তো পালন হল। এটাই বড়।
সেতো গেল গাছ নিয়ে। বাদ দিন ওসব। পিকুদাকে দেখলেন। এক গাল সুপারি মুখে নিয়ে সারাদিন চিবুতে চিবুতে সারা রাস্তা, বাড়ির দেওয়াল, রাস্তার পিচ রঙিন করে দিচ্ছে। দামি ব্র্যান্ডের পেইন্টিংকেও ফেল করে দিচ্ছে। সেই পিকুদাই আমাদের পরিবেশ রক্ষার জ্ঞান দিয়ে চলেছে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে, রাগে কখনো কখনো আমার মুখ ফসকে যাচ্ছে।
আর ঝারুনি পিসির কথাই আলাদা। জানেন বাড়িটা খুব ফিটফাট করে রাখে। একটু ধুলা বা চুল কিংবা গাছের পাতা পড়ে থাকতে দেন না। কিন্তু বাড়ির সব আবর্জনা দেখেছেন ডাস্টবিনে না ফেলে ওই দেখ ঐ দেখ রাস্তার ওপরে ফেলে চলে গেল। সত্যিই বলেন তো এদের গালি ছাড়া আর কি প্রাপ্য আছে!!
জানেন কত প্ল্যান করে, কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতন করছি। ওই দেখ ঐ ঐ । হাঁটছে হাটুক। প্যাকেট খাচ্ছে খাক। কিন্তু দেখ সব প্যাকেট রাস্তায় ফেলে গেল। এই কি শেখালেন। শুধু কি ছেলে মেয়েরা আমরাও কম নই। সত্যিই নিজেকেও গালি দিতে ইচ্ছে করছে।
প্ল্যানিং দাদাও কি কম! বিশেষ করে শহরে কিংবা বাজারে দেখ না । উন্নয়নের নামে কত ধরনের প্ল্যান আসে তাদের মাথায়। এটা করবে ওটা করবে। শেষে উন্নতির নামে ড্রেনের ব্যবস্থা করবে। এটা সব প্ল্যানিং দাদার চরম উন্নতির পরিচায়ক। করবে তো বেশ ভালো কথা কিন্তু ড্রেনের শুরুটা থাকে শেষটা থাকেনা। ফলে ড্রেনের জল ড্রেনে থেকে হয় ডোবা। মশা মাছির ডোবা। আগে গ্রাম্য অবস্থা হলেও ড্রেন দিয়ে হল স্ট্যান্ডার্ড ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার ডোবা। এখনতো বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার ডোবা রও ঢাকনা থাকে। এই পরিবেশ দিবসে তাদেরও কটু কথা বলতে ইচ্ছে করে। মাপ করবেন গালি দেওয়ার সাহস পেলাম না। কারণ তাদের বড়ো হাত আছে। গালি তো সাহস করেও দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ কি শুধু গাছ পালা আর মাটিতে আছে!! মনে নাই ? মনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না!!! অহরহ হচ্ছে। কে কার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। অহরহ মন দূষিত হচ্ছে। মনের পাহারা কে দেবে? রাগ হলেও বলার কিছু নাই এখানে!!
শুধু কি তাই, সমাজ সংসারে, অফিস আদালতে! সেখানকার পরিবেশ কি ঠিক আছে!!! খুব ইচ্ছে করছে কষিয়ে বলতে আর গালি দিতে। থাক তাদেরও সম্মান আছে। নাই বা গালি দিলাম। কবির ভাষায় বলব - ভীষণ মধুর চুমুই খেলাম।
কি আর বলব! আমিও কি কম!! পেটের দায়ে শহরে থাকি, মনের টানে জঙ্গলে যাই। যেতে যেতে কুন্ট্যাল কুইন্টাল কার্বন খাই। জঙ্গলে গিয়ে শান্তি খুঁজি। তার জন্যএও গালি দিই। পারলে সবাই মিলে গালি দাও। স্ল্যাং খুঁজে না পেলে ভদ্র ভাষাতেও দাও। দাও! চলবে.....
No comments