বিরহ গাঁথা : যন্ত্রনার অন্য নাম
বিরহ গাঁথা : যন্ত্রনার অন্য নাম
প্রতিদিনের নিত্য সঙ্গী আমি। আমি ছাড়া তুমি অচল। যেদিন আমি থাকি না, তুমি খুবই
অস্বস্তি অনুভব করতে। আমি দূর থেকে হাসি, আর অনুভব করি " না থাকলে বুঝি অচল হয়ে যাবে" একদিন সঙ্গে না থাকায় সারা দিন বলেছিলে "আজ যেন আমি কি ছেড়ে এসেছি। ভালো লাগছে না।" তখন খুব ভালো লাগতো। নিজেকে আশ্বস্ত করতাম। বলতাম আমিও তার সঙ্গে আছি। আমাকেও তার পাশে থাকতেই হবে।
আমাকে আদর করে রাখতে। অসাধারণ মুহূর্তগুলোতে বিশেষ নজর দিতে। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করতে। দিনের কর্মএর শুরুতেই সবকিছুর নিয়েছো কিনা অনুভবে বুঝিয়ে দিতে। সব ঠিকঠাক আছে কিনা আমিও অবাধ্যের মতো নীরব সঙ্গী হয়ে, হাতের কাছে, পিঠের কাছে, শরীরে লেগেই
থাকতাম। সঙ্গ দিতাম। সুখে দুঃখে তোমার সব সঞ্চয়গুলো গুছিয়ে রাখতম।
সেদিন যখন মুখটা খুলে গেল। ক্যান্সারের মতো সংক্রমিত রোগ ধরা পড়লো, আমার বিকলাঙ্গ মুখ দেখেও তুমি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে না। জড়িয়ে ধরে বেশ সহানুভূতি দিয়ে ক্যান্সারের মতো রোগকেও তাড়িয়ে দিলে। আমিও সেরে উঠলাম। তবে আগের মতো সব ঠিকঠাক চলল না। কিছুটা হলেও আমার মধ্যে খামতি থেকে গেল। আমি তোমাকে আগের মত সঙ্গ দিতে পারলাম না।
লোকে টিটকিরি করতে লাগলো। তোমার লজ্জা দেখে আমিও মাঝে মাঝে লজ্জিত হই। কিন্তু সাহসও পেয়েছি কারণ তুমি সব সময় আমার পাশে ছিলে, পাশে থাকার আগ্রহ দেখে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।
কিন্তু সময় অন্য কথা বলে। ক্যান্সারে আক্রান্ত শরীর কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি দিলেও দীর্ঘ স্বস্তি দেয় না। আমাকেও দিল না। তুমি একদিন সিদ্ধান্ত নিলে নতুন করে সাজাবে। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে নিয়ে, কিন্তু না নতুনকে নিয়ে। বিরহে অশ্রুতে ভেসে গেল শরীর। আজ ভাসতে ভাসতে ডাস্টবিনের একটা কোনে আশ্রয় নিয়েছি। হঠাৎ দেখলাম ডাস্টবিন থেকে তুলে আদর করে গায়ে হাত বুলিয়ে কবেকার জমা পরা ধুলা ঝেড়ে বলে উঠলে "অনেকদিন ছিল আমার সঙ্গে। কত সুখ দুখের সঙ্গী ছিল।" তাতেই চোখের জল গড়িয়ে গেল সুখ স্মৃতিতে। এতেi আমার জীবন সার্থক হলো। নিজেকে ধন্য বলে চোখ বুঝিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলাম। ভালো থেকো। আমি তোমার চিরবিরহী নিত্য সঙ্গী ফেলে দেওয়া প্রিয় ব্যাগ।
No comments