Header Ads

Header ADS

পদ ও পদের শ্রেণি বিভাগ

 পদ ও দের শ্রেণি বিভাগ

 

শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যে স্থানলাভের যোগ্যতা পেলে, বিভক্তিযুক্ত সেই শব্দ বা ধাতুকে পদ বলা হয়।

বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই একেকটি পদ।

যেমন - রাম ভাত খায়। রাম হল সর্বনাম পদ, ভাত হল বিশেষ্য পদ এবং খায় হল ক্রিয়াপদ।

শিশুরা স্কুলে পড়ে' এই বাক্যের মধ্যে ‘শিশু' শব্দটির সাথে ‘’রা, 'স্কু' শব্দটির সাথে “এ”, এবং “পড়' ধাতুর সাথে “এ” যুক্ত হয়ে বাক্যটিকে অর্থপূর্ণ বাক্যে পরিণত করেছে। এখানে “রা”, “এ”, “এ” হলো এক একটি বিভক্তি। এই বিভক্তি সমূহ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে শব্দগুলিকে পদে রূপান্তর করেছে৷ অতএব, শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করে

 

দের শ্রেণি বিভাগঃ

 

সাধারণত পদকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা,

১. নামপদ।

২. ক্রিয়াপদ।

 

 

(১) নামপদ : শব্দের সঙ্গে শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে গঠিত হয়

উদাহরনঃ হাতে কলম আছে। এখানে ‘হাত’ হল একটি শব্দ। এসঙ্গে যুক্ত হয়েছে 'বিভক্তি৷ এর ফলে নাম পদ তৈরি হয়েছে। নাম পদের বিভক্তিহীন মূল অংশটি হল শব্দ।

 

নামপদ চার প্রকার থা -

১. বিশেষ্য পদ

২. বিশেষণ পদ

৩. সর্বনাম পদ

৪. অব্যয়।

 

১. বিশেষ্য পদ : বিশেষ্য কথার অর্থ হল কোনো কিছুর নাম। ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, সমষ্টি, কর্ম, ভাব, কাল গুণ, অবস্থা ইত্যাদিকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে। উদাহরণ: আকাশ, বাতাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল, কলকাতা, হিমালয়, গঙ্গা, পদ্মা, মোবাইল, বই, ঘড়ি, সোনা, রূপা ইত্যাদি।

 

বিশেষ্য পদের শ্রেণিবিভাগ

বিশেষ্য পদকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য পদ- কোনো ব্যক্তি, স্থান, কাল ইত্যাদির নাম

উদাহরণ: রাম, রহিম, গঙ্গা, যমুনা, নজরুল, বাইবেল, রামায়ণ প্রভৃতি।

২.  জাতিবাচক বিশেষ্যপদ- কোনো বিশেষ জাতি বা বস্তু বা প্রাণীকে বোঝানো হয়

উদাহরণ: মানুষ, ফুল, ফল, ছেলে, মেয়ে, পাহার, নদী, হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, বাঙালী ইত্যাদি।

৩.  বস্তবাচক বিশেষ্য- কোনো বস্তর নাম

উদাহরণ: খাতা, কলম, বাই, পানি, দুধ, ডাল, সোনা, রুপা ইত্যাদি।

৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য- কোনো কিছুর সমষ্টি।

উদাহরণ: দল, সভা, সমিতি, জনতা, সংঘ, বাহিনী, ঝাঁ ইত্যাদি।

.  ভাববাচক বিশেষ্য পদ- মনের ভাব, প্রকাশ করা হয়

উদাহরণ: ভ্রমণ, গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন, শ্রবণ, বর্জন, দেখা ইত্যাদি ।

.  গুণবাচক বিশেষ্য- দোষ, গুণ, অবস্থা ও ভাবের নাম

দাহরণ: হিংসা, ঘৃণা, সুখ, দুঃখ, দারিদ্র্য, যৌবন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ।

৭.  ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য- কাজের নাম

উদাহরণঃ দর্শন, ভোজন, শয়ন, গমন প্রভৃতি ।

(2) বিশেষণ পদ দোষ, গুণ, অবস্থায়, সংখ্যা ও পরিমাণ বোঝায়। বিশেশ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে।

উদাহরণ – ভালো ছেলে। নীল পাখি। এখানে ভালো ও নীল বিশেষ্যকে বিশেষিত করে।

বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ

(i) বিশেষ্যের বিশেষণ পদ : বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ।

যেমন— ভালো ছেলে। নীল পাখি। মেঘলা আকাশ, বিদ্বান মানুষ, সাতদিন পরে দেখা, অসুস্থ মানুষ, অনেক লোক, ভালো ছাত্র।

(ii) সর্বনামের বিশেষণ : সর্বনাম পদের গুণ, প্রকৃতি।

যেমন— বোকা তুমি, তাই ওদের কথা বিশ্বাস করলে মূর্খ তুই, এ কথার কী বুঝবি?

(iii) বিশেষণের বিশেষণ : বিশেষণ পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে

যেমন—খুব গরম দুধ, নিতান্ত ভালো মানুষ, অতি বড় নিন্দুকেও একথা বলতে পারবে না।

(iv) অব্যয়ের বিশেষণ : কোনো অব্যয় পদের গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ইত্যাদি প্রকাশ করে।

যেমন—ঠিক নীচে, ধিক্‌, ঠিক ওপরে দেখতে পাবে।

(v) ক্রিয়ার বিশেষণ: ক্রিয়ার পদের দোষ, গুণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে।

যেমন—সে তাড়াতাড়ি লেখে, মিনতি আস্তে আস্তে লেখে।

 

 


(3) সর্বনাম পদ : বিশেষ্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত পদ

যেমন পরি সকালে পড়াশোনা করে। পরি স্কুলে যায়। পরি সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে। প্রত্যেকটি বাক্যে ‘পরি’ শব্দটি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। তার ফলে একটা একঘেঁয়েমি এসেছে।

তবে এভাবে লিখলে — “পরি সকালবেলায় পড়াশোনা করে। সে স্কুলে যায়। সে সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে। এখানে পরি’র পরিবর্তে 'সে' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তাই ‘সে’ পদটি সর্বনাম পদ।

সর্বনামের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ

(i) ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: আমি, তুমি, আমরা, তোমরা, সে, তিনি, তারা, তাহারা, তাঁরা, এরা, , , ওরা ইত্যাদি।

(ii) নির্দেশক সর্বনাম: ইনি, উনি, এটি, সেটি, ওটা, এই, ওই প্রভৃতি

(iii) অনির্দেশক সর্বনাম: কেউ, কেহ, কেউ কেউ প্রভৃতি।

(iv) প্রশ্নবাচক সর্বনাম: কে, কী, কি, কোনটা, কাহার, কেন, কোন, কিসে, কার ইত্যাদি

(v) আত্মবাচক সর্বনাম: নিজে নিজে, স্বয়ং, আপনি প্রভৃতি।

(vi) সম্বন্ধসূচক সর্বনাম: তার, তাঁহার, নিজের প্রভৃতি

(vii) সমষ্টিবাচক বা সাকুল্যবাচক সর্বনাম: সকলের, সকলে, সমস্ত, উভয়, উভয়কে, সমুদয়, তাবৎ প্রভৃতি।

(viii) সাপেক্ষ সর্বনাম : যে-সে, যার-তার, যিনি-তিনি, যা-তা প্রভৃতি।


 

 

 (4) অব্যয় পদ লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে যে পদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকেই অব্যয় পদ বলে।

যেমন—বাঃ! কী মনোরম দৃশ্য। দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? তোমার কিন্তু অবশ্যই যাওয়া চাই। রাম এবং লক্ষ্মণ বন গমন করেছিলেন। এখানে বাঃ, বিনা, কিন্তু, এবং ইত্যাদি পদগুলির দ্বারা কোনো না কোনো ভাব প্রকাশ পেয়েছে। এই পদগুলিকোনো পরিবর্তন হয় না।

 

অব্যয় পদ প্রধানত তিন প্রকার। যথা

(i) পদান্বয়ী অব্যয় পদ

বাক্যে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে।

যেমন—দুঃখ ব্যতীত সুখ লাভ হয় না। রামশ্যাম আজ খেলছে

বাক্যে ব্যবহৃত ‘ব্যতীত’, ‘এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়।

 

(ii) অনন্বয়ী অব্যয় পদ

পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না

যেমন—বাঃ! কী সুন্দর দৃশ্য !

হায়! আমার কপালে কি এই ছিল?

মা, আমাকে আশীবাদ করো।

এখানে বা, হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।

 

(iii) বাক্যান্বয়ী অব্যয়

বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ স্থাপন করে

বাক্যান্বয়ী অব্যয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন -

ক) সংযোজক অব্যয়: যেমন—আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।

খ) বিয়োজক অব্যয় : যেমন—হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।

গ) সংকোচক অব্যয় : যেমন—এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।

ঘ) হেতুবাচক অব্যয় : যেমন—বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তার কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।

ঙ) সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় : যেমন—মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। তুমি আসবে বলে আমি বসেছিলাম। নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় : যেমন- বটে-কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।


 


(B) ক্রিয়াপদ : কাজ করা, হওয়া বা থাকা বোঝায়।

বাক্যের অন্তর্গত যে পদের দ্বারা বিশেষ্যের যাওয়া, আসা, করা, থাকা, খাওয়া প্রভৃতি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।

ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগঃ

ক্রিয়াপদ দু-প্রকারের–(i) সমাপিকা ক্রিয়া ও (ii) অসমাপিকা ক্রিয়া।

(i)            সমাপিকা ক্রিয়া : ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। বাক্যের অর্থ সম্পূরর্ণ হয়। সমাপিকা ক্রিয়া ছাড়া বাক্য সম্পূর্ণ হয় না। 

সে চিঠি লিখেছে।

বাক্যে 'লিখেছে' ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। সুতরাং এটি সমাপিকা ক্রিয়া।

(ii)          অসমাপিকা ক্রিয়া : এই ক্রিয়াপদের দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না

যেমন—

রাম পড়তে ভালোবাসে। বাক্যে ‘পড়তে ক্রিয়াপদ দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় না। তাই এটি অসমাপিকা ক্রিয়া।

 

সাধারণভাবে অসমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের মাঝে বসে এবং সমাপিকা ক্রিয়াপদ বাক্যের শেষে বসে। অর্থভেদে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়াকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়—

(a) সকর্মক ক্রিয়া ও (b) অকর্মক ক্রিয়া।

a. সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন—অঞ্জলি বই পড়ে। আমি চিঠি লিখিসে বল খেলে। এই বাক্যগুলিতে ‘বই, ‘চিঠি, ‘বল'—শব্দগুলি কর্ম। তাই ক্রিয়াগুলি সকর্মক ক্রিয়া।

b. অকর্মক ক্রিয়া : যে সব ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাদের অকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন—আমি যাই। ললিতা পড়ে। তপন ঘুমায়। এই বাক্যগুলিতে কর্ম নেই, তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া।

কারণ কী খাই, কী। পড়ে, কী ঘুমায় প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কী কাকে দিয়ে প্রশ্ন করে কর্ম বের করা যায়।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া :

যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন—মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এই বাক্যটিতে দুটি কর্ম—শিশুকে এবং চাঁদ। এদের মধ্যে বস্তুবাচক ও অপ্রাণীবাচক শব্দ মুখ্য কর্ম এবং প্রাণীবাচক শব্দ গৌণ কর্ম হয়ে থাকে।

 

 

No comments

Powered by Blogger.