বোধ পরীক্ষণ পার্ট - ৬
বোধ পরীক্ষণ পার্ট - ৬
৯
বেপারিটোলা লেনের অত্যাধুনিক অফিসকক্ষে বসে জিরো জিরো গজানন ওরফে
বেলেঘাট্টাই গজানন টেবিলের ওপর দু-পা তুলে দিয়ে পাইপ টানা প্র্যাকটিস করছে।
এককোণে টাইপরাইটার নিয়ে বসে উদাসভাবে কাঁচের জানলা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে
তার অ্যাসিস্ট্যান্ট মিস প্রীতি বল ওরফে পুঁতিবালা। বোধহয় নাগরের কথা ভাবছে।
জিরো জিরো
গজাননের প্রথম কাহিনি যাঁরা পড়েছেন, তাদের কাছে এই দুজনের নতুন পরিচয় দেওয়ার আর দরকার নেই।
গজানন একসময়ে ছিল মেন্টাল ক্লিনিকে রাগের মাথায় লরির ওপর লাফিয়ে উঠে এক লাথিতে
উইন্ডস্ক্রিন চুরমার করে ড্রাইভার-ট্রাইভার সবাইকে পিটিয়ে ঠান্ডা করার পরেই তার
মাথার গোলযোগ দেখা যায় এবং বন্ধুরা টেনে হিঁচড়ে তাকে নিয়ে যায় পাগলের
ডাক্তারের কাছে। ওষুধ নয়, স্রেফ বাক্যের মহিমায় সুস্থ হয়
গজানন এবং ডাক্তারের নির্দেশে প্রতিভাকে কাজে লাগায় দেশের স্বার্থে।
অর্থাৎ স্পাইয়ের ব্যবসা করে। এ ব্যবসায় মারপিট উত্তেজনা হাঙ্গামা আছে, প্রাণটা যখন তখন পালাই-পালাই করে এবং
সেইটাই গজাননের প্রচণ্ড রাগী ব্রেনটাকে বরফের মতো ঠান্ডা রেখে দেয়।
পুঁতিবালাকে সে সংগ্রহ করেছে হিন্দ সিনেমার সামনে থেকে। সন্ধের দিকে
দাঁড়িয়ে কাপ্তেন পাকড়াবার ফিকির আঁটছিল চটুল চোখের ঝলক হেনে, অভাবে স্বভাব নষ্ট আর কী! দেখেই মাথা
ঝ-আঁ করে উঠেছিল জিরো জিরো গজাননের।
তার ওই ঝাকড়া অসুর মার্কা চুলের রুদ্রমূর্তি আর তীব্র চাহনি দেখেই প্রমাদ
গুনেছিল পুঁতিবালা। কিন্তু পালাবে কোথায়? গজানন তাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট বানিয়েছে, তবে ছেড়েছে। তবে বয়সের ধর্ম তো যায় না। শিকার ধরতে বেরোলেই শ্রীমতী
পুঁতিবালা একটু-আধটু এদিক-ওদিক করে বসে। গজানন তা জানে। বকে। দরকার হলে টি-টাটিও
মারে। দুজনের মধ্যে কিন্তু ভারি মিষ্টি ভাইবোনের সম্পর্ক।
এই গেল গজানন-পুঁতিবালার ইতিবৃত্ত। দার্জিলিঙে হিপনোটিক কিলারদের বিরাট
গ্যাংটার বারোটা বাজানোর পর থেকে গজাননের দক্ষিণা আর খাতির দুটোই বেড়ে গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল সিক্রেট সোসাইটি ত্রিশূল এখন আর তাকে ব্যঙ্গার্থে নেকনজরে দেখে না, সত্যি সত্যিই নেকনজরে দেখে এবং জটিল
প্রাণঘাতী কেস না হলে তাকে তলব করে না।
হঠাৎ পাইপ টানা বন্ধ করল গজানন। সাদা প্রিয়দর্শিনী টেলিফোনের পাশে লাল
ইলেকট্রনিক আলোটা জ্বলছে আর নিভছে।
ত্রিশূল-এর টেলিফোন এসেছে। এসব কারিগরি ত্রিশূল কর্তৃপক্ষদের। স্পেশাল
এজেন্টের স্পেশাল ব্যবস্থা তারাই করে দিয়ে গেছে।
ওপার থেকে ভেসে এল রামভেটকি সুরকিওয়ালার অতীব মধুর কণ্ঠস্বর–গজানন, মাই ডিয়ার গজানন, আর ইউ ফ্রি নাই?
আই অ্যাম অলওয়েজ ফ্রি ফর দ্য কানট্রি। এ কটা কথাও লিখে লিখে প্র্যাকটিস
করে নিয়েছে গজানন। দু-চারটে ইংলিশ বুকনি না ছাড়লে এ লাইনে প্রেস্টিজ থাকে না।
কিন্তু বেসরকারি সংস্থা ত্রিশূল তাকে টেনে নিয়েছে ভারতের স্বার্থরক্ষার
জন্যে। এখন রামভেটকি সুরকিওয়ালার ডিম্যান্ড দেশে-বিদেশে–আজ কলকাতায়, এক মাস পরে মস্কোয়, তার পরের মাসে হয়তো ওয়াশিংটনে।
এহেন
কালান্তক যমের সামনে অকুতোভয়ে দাঁড়িয়ে বললে আমাদের জিরো জিরো গজানন, ইয়েস বস, হোয়াট
অর্ডার?
গজানন, কেস সিরিয়াস। অবতার সিং খতম।
অবতার
সিং…অবতার সিং!…কোন অবতার?
ননসেন্স!
অবতার সিং আমাদের কান্ট্রির বেস্ট সায়েন্টিফিক ব্রেন মিলিটারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে
এমন গবেষণা করেছেন যে ভয়ে কাঁটা হয়ে গেছে তামাম দুনিয়া।
তাই নাকি?
আজ্ঞে
হ্যাঁ। একটু কারেন্ট খবর রাখুন,
গজানন। এই যে আইসল্যান্ড সামিট ব্যর্থ হল, গর্বাচভ
আর রেগান যে যাঁর দেশে ফিরে গেলেন। কারণ কী? স্টার ওয়ার্সের
চাইতেও ভয়ানক যুদ্ধ পরিকল্পনা অবতার সিং মাথায় এনে ফেলেছিলেন বলে। খবরটা হাইলি
সিক্রেট–তা সত্ত্বেও লীক আউট হয়ে গেছিল। ফলে আইসল্যান্ডের আইস গলল না–মাঝখান থেকে
অবতার সিং এর মাথাটা গেল।
১। ‘বোধহয় নাগরের কথা ভাবছে’। কে নাগরের কথা ভাবছে?
ক) গজানন খ) পুঁতিবালা
গ) রাম ভেটকি সুরকিওয়ালা ঘ) শ্রীমতি
২। সত্যি সত্যিই নেকনজরে দেখে এবং
জটিল প্রাণঘাতী কেস না হলে তাকে তলব করে না।
এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
ক) গজাননের খ) ত্রিশূলের
গ) মিস প্রীতির ঘ) সকলেরই
৩। গুলি বিনিময়ের ফলে একটা কান হারিয়েছে। কার একটা কান হারিয়েছিল?
ক) ক) গজাননের খ) পুঁতিবালার
গ) রাম ভেটকি সুরকিওয়ালার ঘ) শ্রীমতির
৪। সুরকিওয়ালার ডিমান্ড কোন দেশে
নেই?
ক) কলকাতায় খ) মস্কোয়
গ) ওয়াশিংটনে ঘ) মালয়েশিয়ায়
৫। খবরটা হাইলি সিক্রেট–তা সত্ত্বেও লীক আউট হয়ে গেছিল। খবরটা কী ছিল?
ক) যুদ্ধ পরিকল্পনা খ) মিলিটারির অস্ত্র-শস্ত্র
গ) কলাইকুণ্ডায় হেলিকপ্টার নামা ঘ)
গজাননের বাড়ি আসা
৬। ‘ধ’ বর্গের ধ্বনি
ক) ত খ) ট গ) প
ঘ) চ
৭। সন্ধির সূত্র অনুযায়ী নিচের প্রদত্ত বিকল্পগুলির মধ্যে কোনটি ঠিক নয়?
ক) চ/ছ থাকলে ত/দ স্থানে চ হয়।
খ) জ/ঝ থাকলে ত/দ স্থানে জ হয়।
গ) শ থাকলে ত/দ স্থানে স হয়। [ত>চ, শ>ছ]
ঘ) ল থাকলে ত/দ স্থানে ল হয়।
৮। ‘সেতার’ যে সমাসের দৃষ্টান্ত
ক) বহুব্রীহি খ) দ্বন্দ্ব
গ) দ্বিগু ঘ) কর্মধারয়
৯। যুদ্ধের সময়ে শত্রুপক্ষের পেছনে প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে নেমেছে, টেলিকমিউনিকেশন
সেন্টার ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে, অপারেশনাল হেড
কোয়ার্টারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, বড় ঝামেলা পাকাচ্ছিল বলে
বিশেষ এক কম্যান্ডারকে খতমও করেছে। - উদ্ধৃত অংশে কয়টি বাক্য আছে?
ক)
১টি খ) ২টি গ) ৩টি ঘ) ৪টি
১০
স্টেন গানের বুলেটে বুলেটে
আমার ঝাঁঝরা বুকের উপরে ফুটে উঠেছে যে মানচিত্র—
তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার প্রতিটি রক্তের ফোঁটা দিয়ে
চা-বাগিচায় কফি খেতে,
কয়লা-খাদানে, পাহাড়ে-অরণ্যে
লেখা হয়েছে যে ভালোবাসা—
তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার অশ্রুর জলসেচে আর হাড়ের ফসফেট-এ
খুনীর চেয়েও রুক্ষ কঠোর মাটিতে
বোনা হয়েছে যে-অন্তহীন ধান ও গানের স্বপ্ন—
তার নাম ভারতবর্ষ।
আমার ঠাণ্ডা মুখের ওপর
এখন গাঢ় হয়ে জমে আছে
ভাক্ রা নাঙ্গালের পাথুরে বাঁধের গম্ভীর মুখটি’।
ডিগবয়ের বুক থেকে
মায়ের দুধের মত উঠে আসা তোলো ভেসে যাচ্ছে
আমার সারা শরীর।
১। ভারতবর্ষের মানচিত্র কোথায় দেখা যায়?
ক) কবির ঘরের দেওয়ালে খ) স্টেনগানের উপরে
গ) পাহাড়ে অরণ্যে ঘ) ঝাঁঝরা বুকের উপরে
২। ভালোবাসা কীসের ওপর লেখা হয় নি?
ক) রক্তের ফোটায় খ) রুক্ষ কঠোর মাটিতে
গ) কয়লা খাদানে ঘ) পাহাড়ে অরণ্যে
৩। কবির মুখের উপর জমে আছে –
ক) ঠান্ডা খ) গাঢ় অন্ধকার
গ) গম্ভীর ছায়া ঘ) দুধের সর
৪। ভারতবর্ষ শব্দটির বর্ণ বিশ্লেষণ কর
ক) ভ্+আ+র্+আ+ত্+ব্+অ+র্+ষ্+অ খ) ভ্+আ+র্+ত্+ব্+অ+র্+ষ্+অ
গ) ভ্+আ+র্+অ+ত্+ব্+অ+র্+ষ্+অ ঘ) ভ্+আ+র্+অ+ত্+ব্+অ+র্+অ+ষ্+অ
৫। ‘ভাক্ রা নাঙ্গালের পাথুরে বাঁধের গম্ভীর মুখটি’। বচনযুক্ত পদটি নির্দেশ কর।
ক) ভাক্ রা
খ) নাঙ্গালের
গ) মুখটি ঘ) বাঁধের
৬। শরীর পদের পদপরিবর্তন করো
ক) শারীরিক খ) শরীল
গ) শারিরিক ঘ) দেহ
No comments